রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি না জানা থাকে। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন। অনেকে রয়েছেন রসুন খেয়ে থাকে এবং রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকের তেমন কিছু জানেনা। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে একটি সঠিক ধারণার দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত  জানুন
আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম, কাঁচা রসুন খাওয়া উপকারিতা, রসুন খেলে খেলে কি ক্ষতি হয়, এই সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা আশা করছি পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

রসুন খেতে অনেকেরই পছন্দ, আবার অনেকে আছেন যারা রসুন খেতে পছন্দ করেন না। এবং রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের জন্য বেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাছাড়াও তরকারি সুস্বাদু করার জন্য অন্যান্য পিয়াজ অথবা মরিচের সাথে রসুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রসুন সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এবং প্রাচীনকাল থেকে এটি ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে মানুষ। তাই রসুন খাওয়ার ফলে অনেক উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা আসুন জেনে নেওয়া যাক রসুন খাওয়ার উপকারিতা গুলো ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।

সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।কারণ রসুনের রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিতে ভরপুর। এবং এতে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, রাইবোফ্লাভিনের মতো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

রসুন খেলে পেটে স্বাস্থ্য ভালো থাকেঃ সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে লিভার এবং মুত্রাশয়ের এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি তার পাশাপাশি ডায়রিয়া উপশময় কাজ করে থাকে। এবং হজম শক্তি ক্ষুধা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই রসুন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক রসুন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

রসুন খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, আপনি এটাকে কাঁচা এবং কোয়া আকারে খেতে পারেন। রসুন খাওয়ার আদর্শ সময় হিসাবে বলা হয়ে থাকে। সকালে খালি বা ভরা পেটে রসুন খাওয়া। অর্থাৎ কারো যদি খালি পেটে খেলে গ্যাস বা বুক জ্বালাপোড়া করে তাহলে অবশ্যই ভরা পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে আপনার যদি অন্য কোন সমস্যার কারণে রসুন খাওয়া নিষেধ না থাকলে অবশ্যই নিয়মিত সকালে একটি করে কোয়া চিবিয়ে খেতে পারেন।

তবে এটি আপনি পরিমাণ মতো ২-৫ টি খেতে পারেন। যেহেতু এটা মসলা হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায় সেহেতু পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে খাওয়া খেতে পারেন।আবার অন্য দিকে কাঁচা রসুন কুচি কুচি করে হালকা করে ভেজে অথবা থেতো করে ওষুধের মত গিলেও খেতে পারেন।


পুষ্টিবিদ্যারা জানান যে ২-৪ টি কোয়া রসুন সকালে অথবা রাতে সব থেকে খেলে বেশি উত্তম। এবং এভাবে যদি রসুন খাওয়া হয় তাহলে শরীরের মাত্রার সাথে খাপ খায় এবং কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন খাওয়া মোটেও যাবে না।কারণ অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রক্ত বেশি পাতলা হয়ে ইন্টারনাল ব্লিডিং, সমস্যার সহ আরো নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রসুন খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা রসুন অনেকে খেতে পছন্দ করে থাকে, এবং কাঁচা রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যারা হয়তো জানেনা, তাদের জন্য এটা বেশ উপকারী। কাঁচা রসুন খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং রক্ত উপকারী ও ক্ষতিকর দিক দুই ধরনের কোলেস্টেরলে থাকে তার মধ্যে রয়েছে এলডিএল কোলেস্টেরল ক্ষতির দিক দিয়ে সব থেকে বেশি মারাত্মক অবস্থানে রয়েছে।

এই উপাদান রক্তে বেশি পরিমাণে থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগের নানা ধরনের সমস্যা বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। রসুন রক্তে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল যেমন এলডি এল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যা উপরে থাকা এ সমস্ত রোগ সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।


রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়ঃ আমাদের মানব দেহকে রক্ত সঞ্চালন সুস্থ সবল রাখে। অর্থাৎ কোন কারনে সঞ্চালনে বাধা প্রয়োগ হলে তা আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। যার মধ্যে হৃদরোগ সব থেকে বেশি মারাত্মক জনক। এবং নিয়মিত রসুন খাওয়ার ফলে রক্ত তরল রাখে এতে শিরা-উপশিরা সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন সৃষ্টি হয়। এবং হৃদরোগ সহ আরো উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।

পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আমরা প্রথমেই জেনেছি রসুন রক্তে চলাচল গতিকে বেশ সবসময় সচল রাখার চেষ্টা করে। এতে মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গে সঠিকভাবে মাত্রায় রক্ত সঞ্চিত হয়ে থাকে, যা পুরুষের যৌন সমস্যা সমাধান করে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ রক্তে এলডি এল থাকার কারণে কোলেস্টরেল মাত্রা বেড়ে গেলে তা উচ্চ রক্তচাপ  বাড়ায়। যা উচ্চ রক্তচাপ স্টক থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের সমস্যার ওর শারীরিক নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। তাই নিয়মিত রসুন খেলে এই রক্তে থাকা ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হাড়ের ক্ষয় এসব জটিলতা সমস্যায় অনেকে ভুগেন। অর্থাৎ বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের পর মহিলাদের শরীরে এসব ইস্ট্রোজেন হরমোন নামে যে ফিমেল হরমোন রয়েছে তা তাপমাত্রা কমে যায়।যার ফলে মহিলাদের শরীরে হার ক্ষয় হতে থাকে। এবং এই হাড় ক্ষয়রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে বেশি বেশি ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণের।এবং রসুন খাওয়ার ফলে এই হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা বাড়ি দিয়ে হাড় ক্ষয়রোধ করে থাকে। তার পাশাপাশি হাড়ের গঠন শক্তিশালী বৃদ্ধি করে।

কোষের ক্ষতিরোধ করেঃ স্বাভাবিক জীবনযাপনের রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার কারণে বা কোন সংক্রমণ হলে শরীরের নানা কোষ নষ্ট হতে থাকে। অতএব এর সমস্যা অনেক মারাত্মক আকারে ধারণ করে যখন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কোষ মারা গিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত রসুন খাওয়ার ফলে এই কোষের এই ক্ষয়রোধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ রসুনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষের ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

রসুন খাওয়ার অপকারিতা

কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। রসুনে অনেক পুষ্টিকর থাকলেও এবং রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও, এর অপকারিতা ও রয়েছে। আমরা অনেকে রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানে না। আসুন জেনে নেওয়া যাক রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

যকৃতের ক্ষতিঃ রক্ত পরিশোধন, চর্বি ও প্রোটিন বিপাক থেকে অ্যামোনিয়া অপসারন ও ইত্যাদি হলো যকৃতের একটি অন্যতম কাজ। অনেক সময় গবেষণা বলে থাকেন যে রসুন এ থাকা অ্যালিসিন উপাদান যা যকৃতে বিসিক ক্রিয়া তৈরি করে থাকে।যদি এটি মাত্রাতিরিক্ত রসুন খাওয়া হয়।

ডায়রিয়াঃ খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ রসুন এ রয়েছে সালফার যা পেটে গ্যাস তৈরি করে থাকে এবং ডায়রিয়া হওয়ার পিছনে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

বমি ও বুক জ্বালাপোড়াঃ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এর প্রকাশিত গবেষণায় অনুযায়ী, যদি খালি পেটে কাঁচা রসুন সেবন করা হয় তাহলে বুক জ্বালাপোড়া ও বমি ভাব হতে পারে।এবং রসুনের এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা জিআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ হওয়ার কারণ।

দুর্গন্ধঃ রসুন অতিরিক্ত মাত্রা খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। মূলত এর প্রধান কারণ হচ্ছে রসুনের থাকা সালফার।


রক্তপাত বাড়ায়ঃ রক্তের ঘনত্ব কমানোর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে এটি বেশ খ্যাতি রয়েছে রসুনের। এবং ওয়ারফারিন অ্যাসপিরিন ইত্যাদি এসব ধরনের ব্ল্যাক থিনার ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের জন্য অতিরিক্ত রসুন খাওয়া মোটা উচিত হবে না। যার ফলে এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে থাকে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত শুরু হতে পারে।

ঘাম বাড়ায়ঃ একাধিক ক্লিনিকাল স্টাডিতে দেখা গেছে যে দীর্ঘদিন ধরে রসুন খাওয়ার ফলে শরীরে ঘাম হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।

মাথা ঘুরানোঃ অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যার কারনে দেখা দিতে পারে নিম্ন রক্তচাপের বিভিন্ন উপসর্গ।

দৃষ্টিশক্তি সমস্যাঃ অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে হাইফিমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ আইরিস ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।অর্থাৎ যার কারণে ফলাফল হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তি।

নারী যৌনাঙ্গের পদাহঃ নারী যৌনাঙ্গে ইস্টজনিত প্রদাহের চিকিৎসা চলাকালীন রসুন থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ রসুন যৌনাঙ্গের বেশ সংবেদনশীল টিস্যুতে অস্তিত্ব সৃষ্টি করে থাকে। যার কারনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য নয়ঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য রসুন মোটেও খাওয়া উচিত হবে না। এবং রসুন থেকে বিরত থাকাই উচিত। কারণ এতে রয়েছে লেভার পেনন বা প্রসব বেদনার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এমনকি যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও রসুন খাওয়া উচিত হবে না রসুন থেকে বিরত থাকাই উচিত কারণ দুধের স্বাদ পাল্টে দেয়।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক উপর থেকে আমরা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশা করি আপনাদের সঠিক ধারণাটা দিতে পেরেছি।

রসুনের অনেক পুষ্টিকর রয়েছে এবং রসুন আমাদের মানবদেহের জন্য বেশ উপকারী।একজন ব্যক্তি সুস্থ সবল থাকার জন্য রসুন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।তাই প্রতিদিন নিয়মিত ২-৩ টি কোয়া করে রসুন খেতে পারেন। এতে করে অনেক উপকার মিলবে।

তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। প্রত্যেকটা খিচুড়ি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই অতিরিক্ত রসুন খাওয়া মোটে উচিত হবে না । এতে ক্ষতিকর হতে পারে।

আশা করি আপনারা হয়তোবা এতক্ষণে জেনে গেছেন রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে, যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url