নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি না জানা থাকে। তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। নিম পাতা আমাদের শরীরের ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তবে অনেকেরই নিম পাতা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নাই। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে সঠিকভাবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়তেন আগ্রহী হন। তাহলে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়? নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম, নিম পাতার ব্যবহার, নিম পাতার মুখে দিলে কি হয়? চুলকানিতে নিমপাতার ব্যবহার ইত্যাদি এসব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিম পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুন। তাছাড়া নিমের যাবতীয় ডাল পাতা, রস সবই কার্যকর। প্রায় এটি পাঁচ বছর ধরে আমাদের বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে এ ঔষধি গাছ হিসেবে নিম পাতার ব্যবহার করে থাকে। প্রকৃতি কি করে একই সাথে এই সমস্যার সমাধান ধারণ করতে পারে তার একমাএ উদাহরণ হচ্ছে নিম।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়?

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো।

রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণঃঃ অনেকেরই ভুল জীবন যাত্রার কারণে, বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখ ও ডায়াবেটিসহ রোগীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে এখনো অনেকে আছে যারা ঘরোয়া প্রতিকারে এটি বিশ্বাস করে। এবং এ ঘরোয়া প্রতিকার গুলোর মধ্যে হচ্ছে নিম পাতা। সকালে খালি পেটে নিমপাতা ও নিমের রস খেলে, অনেকটা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্ত পরিষ্কার রাখেঃ নিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণ রয়েছে। যার কারণে এটি শরীরে রক্ত সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এবং এটি রক্ত থেকে টক্সিন বের করে রক্তকে ডিটস্কিফাই করে থাকে। তবে আপনার রক্ত যদি পরিষ্কার ও ভালো থাকে তাহলে কোন রোগ হবে না।

পেটের জন্য উপকারীঃ নিম শুধু আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী নয়, এটি শরীর স্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি পেটের জন্য বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়। নিম পাতায় রয়েছে গুনাগুন ও এটি অ্যাসিডিটিতে বেশ উপকারী। এবং এটি নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সকালে খালি পেটে গ্রহণ করলে, অ্যাসিডিটি ও পেটে ব্যথা থেকে অনেকটা নিরাময় হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ নিম পাতায় রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল। এবং আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ থেকে ক্ষমতা বাড়াতে বেশ সাহায্য করে থাকে। শুধু তাই নয় এছাড়াও এটি বিভিন্ন অসুখ বিসুখ এমন কি সর্দি কাশির মতো এসব রোগ নিরাময় করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতায় রয়েছে অনেক গুনাগুন যা রক্তের সুগার লেভেল কমাতেও বেশ সাহায্য করে থাকে। তাছাড়াও এটি রক্তনালীকেও প্রসারিত করে এবং তার পাশাপাশি রক্ত সংবহন উন্নত করে থাকে। তবে ভালো ফল পেতে হলে, প্রথমে নিমের কচি পাতা রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। কারণ সকালে খালি পেটে ৪/৫ টা গোল মরিচ ১০/১২ টি নিম পাতা ভালোভাবে বেটে  খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতেও বেশ সাহায্য করে।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে এ নিম পাতা বেশ কার্যকরী। তাছাড়া এ নিম পাতায় রয়েছে ওষুধে গুনাগুন, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর কোন জুড়ি নেই।নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে   এটি আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ত্বকে নিমপাতা উপকারীঃ অনেকদিন থেকেই এই নিম পাতা রূপচর্চার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে নিম পাতা খুব ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটি ভালো কাজ করে। যাদের ব্রণ এর সমস্যা তারা দূর করার জন্য নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন। অনেকেরই মাথার স্কাল্পে চুলকানি ভাব হয় ও চুলকায়, নিয়মিত নিম পাতার রস মাথায় লাগালে এ চুলকানি কমে যায়। তবে নিয়মিত নিম পাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ একত্রে পেস্ট করে ভালোভাবে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও স্কিন সৌন্দর্য ও টানটান হয়ে।

চুলে নিমপাতাঃ অনেকে আছেন যারা চুল নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকেন, অনেকেরই চুল ড্যামেজ,সূক্ষ্মতা ও আদ্রতা ভাব থাকে। তারা সুন্দর উজ্জ্বলতা, দৃষ্টিনন্দন, চুল পেতে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন এটি বেশ কার্যকারী। তাছাড়া ও চুলের খুশকি দূর করতে শ্যাম্পু করার পর নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ভালোভাবে স্কাল্পে দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে করে অনেকটাই খুকসি দূর হয়ে যাবে। চুলের জন্য নিম পাতা ব্যবহার অপরিহার্য। সপ্তাহে একদিন করে নিম পাতা ভালো করে বেটে চুলের স্কেলপে লাগিয়ে রাখুন। এভাবে ১  ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি চুল নরম ও কোমল রাখবে।

কৃমিনাশকঃ পেটে কৃমি হওয়ার ফলে, অনেক শিশুরাই রোগা হতে দেখা যায়। আবার পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাসে ও হলদে হয়ে যায়। তবে বাচ্চাদের পেটে কৃমি নিরাময় করার জন্য নিম পাতার কোন জুরি নেই।

দাঁতের রোগঃ দাঁতের সুস্থতা থাকার জন্য নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে অনেক আদিম কাল থেকে। তাছাড়া নিমের পাতা ও ছালের গুড়া অথবা নিম ডাল দিয়ে এটি নিয়মিত দাঁত মাজলে,দাঁত হবে মজবুত ও চকচকে তাছাড়াও রক্ষা পাবে দন্ত রোগ থেকেও।

নিম পাতার ব্যবহার

এটি সাধারণত ভাবে নিম পাতার প্রথমে পেস্ট করে তৈরি করে, তার মধ্যকার থেকে রস বের করে খেতে হবে। অবশ্যই সেদিকে খেয়াল রাখবেন টাটকা ও তাজা নিম পাতার রস খাওয়া উচিত। আপনি চাইলে নিম পাতা ভালোভাবে শুকিয়ে হাত দিয়ে মাখিয়ে রসুন ও সরিষার তেল এর সাথে মিশ্রণ করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।

নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়?

আপনারা তো ইতি মধ্যে জেনে গেছেন যে নিম পাতার উপকারিতা অনেক। তবে নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যা খুব সহজেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়াও নিম পাতা ব্যবহার করার ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক মুখে নিম পাতার উপকারিতা

  • পাতা থাকায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে।
  •  নিমপিতা ব্যবহারের ত্বক উজ্জ্বল, নরম ও কোমল হয়।
  • নিম পাতা ত্বকের দাগছোপ কমাতে এটি সাহায্য করে থাকে
  • তাছাড়াও নিমপাতা বলি রেখা প্রতিরোধ করতে এর বেশ ভূমিকা পালন করে।
নিম পাতার ক্লিনজারঃ নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যার কারণে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। এবং ত্বকের ব্রণ ব্ল্যাকহেডস সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা জনিত দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী। তার পাশাপাশি পরিষ্কার করে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব।লোমকূপে যেসব লুকাই থাকা ময়লা রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করতে বেশ সাহায্য করে এই নিম পাতা।

নিম পাতার ক্লিনজার তৈরি করার জন্য প্রথমে কয়েকটি নিমপাতা নিন। তারপর পরিষ্কার একটি হাড়িতে ভালোভাবে উষ্ণ গরম পানি ফুটিয়ে নিন। তার মধ্যে কয়েকটি নিমপাতা ভালোভাবে ছেড়ে দিয়ে ফোটান। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি সবুজ না হয়ে যায় যতক্ষণ ধরে এটি ফোটাতে হবে।তারপর পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালোমতো ছেকে নিতে হবে। এবং পরিষ্কার নরম তুলার সাহায্যে মুখে ও গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।এতে করে আপনার ত্বক বিভিন্নভাবে উপকৃত মিলবে।

নিম পাতার ফেসপ্যাকঃ সাধারণত ত্বকে যে কোনো সমস্যাই হোক না কেন সবকিছুতেই নিমপাতা বেশ কার্যকারি।ত্বকের ইনফেনশন থেকে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে নিম পাতা ব্যবহার করলে ত্বকে অনেক উপকার পাবেন। আবার এটি ত্বক ড্যামেজ ও রুক্ষ থেকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বেশ কাজ করে থাকে এ নিম পাতা।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

কমবেশি  পাচরা ও চুলকানি অনেকেরই হয়ে থাকে। অনেকে এ চুলকানি নিয়ে খুব অস্বস্তি বোধ করেন। কারন পরবর্তী এ চুলকানির কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও ঘা দেখা যায়। তবে চুলকানির ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহার খুবই কার্যকরী।

কারণ নিমের প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একুশে শতকের বৃক্ষ বলে এটিকে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নিম পাতা সিদ্ধ করে তার পানি দিয়ে ভালোমতো গোসল করলে, খোস পাঁচড়া চলে যায়। এবং নিম পাতা ও ফুল ভালোভাবে বেটে কয়েক দিন ধরে শরীরের লাগালে, চুলকানি ভালো হয়। তবে নিম পাতার উপকারিতা ও গুনাগুন যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী  আবার পাতা ভেজে গুড়া করেও সরিষা তেলের সাথে মিশ্রণ করে এটি চুলকানিতে লাগালে পারে, এটি দুর্দান্ত কাজ করে।

নিম পাতার অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।তবে এর   গুনাগুন থাকলেও এর অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে নিচে দেয়া হলো।

  • খালি পেটে নিম পাতার রস বেশিদিন খাওয়া মোটেও উচিত হবে না। কারণ এ থেকে অনেক সমস্যা পড়ার আশঙ্কা থাকে।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার পর যদি বমি বমি ভাব ও বমি অনেকের হয়ে যায়। প্রতিবার যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই এই রস খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিম পাতা ও নিম পাতার রস না খাওয়াই উচিত। কারণ এটি গর্ভপাতের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা উপর থেকে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম আশা করি আপনাদেরকে সঠিকভাবে ধারণা দিতে পেরেছি।

নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী এবং কার্যকারী। তাই আপনি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন ও নিম পাতার রস খেতে পারেন।

আশা করি আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Md Sirajul Islam
    Md Sirajul Islam May 25, 2024 at 7:46 PM

    অসাধারণ লাগলো।
    আপনার পোস্টগুলো আমি রেগুলার পড়ি আমার অনেক ভালো লাগে এবং উপকৃত হই।
    আশা করি এমন ভালো কাজগুলো রেগুলার করে যাবেন

    • azima blog
      azima blog May 25, 2024 at 11:41 PM

      আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ,আশা করি এই ভাবে আমাদের পাশে থাকবেন। আর অবশ্যই আপনার মতামত জানাই দিবেন । ভালো থাকবেন

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url