সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। অনেক মানুষই রয়েছে যারা সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেতে খুব ভালোবাসে। তাছাড়াও জিরা রান্না হিসেবেও ব্যবহৃত করা হয়। তবে অনেকের সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নাই। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে সঠিকভাবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়তে আগ্রহী হন। তাহলে সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা, জিরা পানি খাওয়ার সময়, জিরা পানি খেলে কি হয়? জিরা পানি তৈরির নিয়ম, জিরা পানি কিভাবে খেলে ওজন কমে, ইত্যাদি এ সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
জিরা মসলা হিসেবে সবার কাছে অতি পরিচিত। তবে এটি আমাদের রান্নার কাজে মসলার মস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জিরা ব্যবহারে প্রধান কারণ হচ্ছে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য এর কোন তুলনা হয় না। শুধু তাই নয় এর আরও রয়েছে অনেক উপকারিতা। প্রতিদিন নিয়মিত জিরা খেলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয় এবং তার পাশাপাশি হজমের সমস্যা ও দূর করে থাকে। এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ ও রক্তস্বল্পতা দূর করার পাশাপাশি ওজন কমাতেও এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আমাদের শরীর সুস্থ রাখার নানাভাবে কাজ করে থাকে জিরা।
জিরা পানি কিভাবে খেলে ওজন কমে
যাদের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় তাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে ওজন বাড়তেও যেমন অনেকটা সময় লেগে যায় তেমনি ওজন কমাতেও অনেকটা সময় লাগে।তবে জিরা পানি কিভাবে খেলে ওজন কমে তা অনেকে জানে না।সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে কিছু ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ওজন কমাতে পারবেন খুব সহজে। জিরার অনেক গুণাগুণ রয়েছে। কারণ জিরাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জমে থাকা টক্সিন দূর করে থাকে। যার ফলে হজম শক্তি বাড়ে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সকালে খালি পেটে জিরা পানি পান করুন। আপনি খুব সহজে জিরা ভিজানো পানি দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
জিরা পানি খেলে কি হয়?
জিরা শুধু আমাদের খাবারের স্বাদ যোগ করা করা ছাড়াও আমাদের শরীরের নানাভাবে কাজ করে থাকে। আপনি যদি জীরা থেকে সুস্বাস্থ্য পাওয়ার জন্য, প্রথমে এক চামচ জিরা, এক কাপ পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে ছেকে নিন। এই জিরা পানি আপনার শরীরের একাধিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দূর করবে এবং তার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের সমস্যার সমাধান করবে। আর আপনি যদি সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন। খালি পেটে জিরা পানি খেলে অনেক গুনাগুন ঔষধি হিসেবে কাজ হয়। তবে জিরা পানি প্রতিদিন খালি পেটে খাওয়া উচিত।
জিরা পানি খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
- জিরা পানি হজমে সাহায্য করে।
- টক্সিন দূর করে থাকে।
- অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করে
- স্মৃতিশক্তি মান বৃদ্ধি ও উন্নতি করে।
- ত্বককে পোস্ট করতে সাহায্য করে।
- শ্বাসযন্ত্রকে উন্নতি করে থাকে।
- ঘুম ভালো হয়
- শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে।
জিরা পানি আপনাকে নানা ভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ কার্যকরী।
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা
জিরা মসলা হিসেবে সবাই ব্যবহৃত করে থাকলেও এটির অনেক গুণাগুণ উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি সকালে খালি পেটে জিরা পানি খান তাহলে অনেক উপকারিতা পাবেন। তবে অনেকে আছেন যারা জিরা পানি খেতে পছন্দ করে না, তারা এই উপকৃত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ জিরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, তামা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, জিংক ও পটাশিয়াম ইত্যাদি। তবে ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে জিরা ব্যবহার করা হয়। আমাদের স্বাস্থ্যের বিশেষ উপকারী হলো জিরা ভিজানো পানি।
তবে আপনি যদিসকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর পরিমাণে তাই প্রতিদিন এক গ্লাস করে জিরা পানি পান করেন তাহলে আমাদের শরীরে নানা উপকার মিলবে। তবে সকাল বেলা খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয়?
বদহজম দূর করেঃ অনেকেরই এই বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে,অন্তে গ্যাস জমে গিয়ে পেট ফুলে যায়। এবং পেট ফুলে অনেক সময় পেট শক্ত হয়ে যেতে পারে, ও পেট ভার হয়ে থাকে।এবং সেই সাথে পেট ব্যথা ও পেঠে অস্থিরতা দেখা দেয় এই সমস্যাকে সাধারণ মনে হলে এটি খুব ভোগান্তি কম কিছু নয়।তবে এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই জিরা ভিজানো পানি পানের অভ্যাস করতে হবে। এবং বদহজমের সমস্যা দূর করতে জিরা বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওজন কমায়ঃ যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভুগছেন এবং ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তাদের জন্য এই জিরা পানি খুব উপকারী। অর্থাৎ জিরা ভিজানো পানি পান করলে হজম হতে ভালো সাহায্য করে থাকে। তাছাড়াও শরীর থেকে সব ধরনের দূষিত পদার্থ গুলো বের করে দিয়ে থাকে। যদিও আপনার শরীরের পাচন তন্ত্র ঠিক থাকে তাহলে খুব সহজেই শরীর থেকে দূষিত যে পদার্থগুলো রয়েছে তা খুব সহজে বের হয়ে যায়। যার ফলে ফ্যাট ওজন দুটোই খুব দ্রুত কমে। তাই নিয়মিত সকালে খালি পেটে জিরার পানি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে জিরা খুব ভালো কাজ করে। জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন ও ফাইবার ইত্যাদি। যদি আপনি নিয়মিত জিরা ভিজানো পানি পান করে থাকেন তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতি দ্রুত ও শক্তিশালী করে তুলবে জিরা পানি। শুধু তাই নয় এটি নানা ধরনের রোগের সাথে ও লড়াই করতে পারে।এবং তার পাশাপাশি ঘন ঘন অসুখ থেকে আক্রান্ত হওয়ার কোন ভয় থাকে না।
নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিসঃ যারা ডায়াবেটিস নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য জিরা পানি খুবই উপকারী। এবং এটি ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী। তাছাড়া ও জেরা আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে নিয়ন্ত্রণে রাখে শর্করার মাত্রা। যার ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।
নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপঃ অনেকে আছেন যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেন, তারা নিশ্চিন্তে এই জিরা পানি খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ পটাশিয়াম। তবে এটিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা আমাদের শরীরে ক্রিয়া-কলাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।এবং জিরা পানি খেলে লবণের ক্ষতিকারক ও প্রভাব গুলো রয়েছে সেগুলো ভারসাম্য বজায় রাখে। যার ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তচাপ।
জিরা পানি তৈরির নিয়ম
জিরা পানি তৈরির নিয়ম তা নিচে দেয়া হলো।
উপকরণ
- জিরার গুঁড়ো
- আখের গুড়
- চিনি
- পানি
- তেঁতুলের ক্লাথ
- লেবুর রস
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমে আপনি ব্লেন্ডারের সাহায্যে এক গ্লাস পানি পরিমাণ মতো ১/২ চামচ তেতুলের ক্লাথ, ১/২ চামচ গুড় পরিমাণ মতো চিনি ও লেবুর রস তার সাথে ১/২ চামচ জিরের গুড়ো দিয়ে ভালোভাবে একত্রে মিশ্রণ করে ব্লেন্ডার করে নিতে হবে।
ব্লেন্ডার পড়া শেষে ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে গ্লাসে করে সাজিয়ে সুন্দর করে পরিবেশন করুন। ব্যাস হয়ে গেল আপনার জিরা পানি। আশা করি এই জিরা পানি খেয়ে অনেক উপকৃত হবেন।
জিরা মসলা হিসাবে সবাই চিনলেও এর নানা ওষুধি গুণ রয়েছে। এটি খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকে। আমাদের পেটের বিভিন্ন অসুখ কমানোর পাশাপাশি এটি হজম শক্তি বাড়ায়।তবে সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা রয়ছে ।শুধু তাই নয় সেই সাথে অ্যাজমা জনিত সমস্যা ও কমায়। এবং ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা, তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় সমাধানঃ পেটের গ্যাস্টিকের সমস্যা সমাধান করতে জিরা খুব ভালো কাজ করে থাকে। তবে পেটের ব্যথা কমাতেও এটি বেশ কার্যকরী। তার পাশাপাশি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও ভালো কাজ করে জিরা। এবং যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা দিনে তিনবার জিরা দিয়ে তৈরি চা পান করতে পারেন। এ তো অনেক উপকৃত হবেন।
অনিদ্রা দূর করেঃ অনেকেরই রাতে ঘুম ভালো না হয়ে শরীরের প্রভাব পড়ে। এবং সারাদিন মেজাজ খিটখিটে , কোন কাজে মন না থাকা ও কাজ না করা দেখা দেয়। তবে অনিদ্রার সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে এটি আরো বড় ধরনের অসুখ এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আপনার যদি এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ঘুমানোর আগে এক চামচ চটকানো কলার সাথে আধা চামচ জিরা গুড়া মিশ্রণ করে খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে অনেক উপকার মিলবে। এবং জিরা ও কলা একত্রে খেলে মস্তিষ্কে মেলাটনিক নামে এক ধরনের কেমিক্যালের ক্ষরণ বেড়ে যায়।যার ফলে এই কেমিক্যাল ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
জ্বরের প্রকোপ কমায়ঃ জিরাই রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রপাটিজ, যা ঠান্ডা লাগা ও জ্বরের প্রবন কমাতে এটি ভালো কাজ করে থাকে। জিরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার কারনে ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ কমে। তবে এক গ্লাস পানিতে ১/২ চামচ জিরা অল্প সামান্য আদা মিশিয়ে নিন।তারপর ভালোভাবে পানিতে ফুটিয়ে ছেকে নিন। অর্থাৎ সেই পানি সারাদিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন। এতে অনেকটা জ্বর কমে যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ জিরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যার কারণে অনেকগুলো এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জিরা খাওয়ার ফলে পাইলসের কষ্ট কারোক রোগ কমাতেও এটি বেশ সাহায্য করে। অতএব প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জিরা ভিজানো পানি পান করুন। এতে করে অনেক উপকৃত হবেন।
জিরা খাওয়ার অপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না আমাদের শরীরের জন্য, জিরাতে অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কার্যকারী। তবে অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে রক্তকে তরল করে দিতে পারে। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত জিরা খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষ ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত জিরা খেলে রক্তের শর্করা মাত্রা হঠাৎ করে কমে দিতে পারে। যার কারণে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যেতেও পারে।
- জিরার তেল বেশি ব্যবহার করলে, অতিরিক্ত প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উপর থেকে আমরা সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। আশা করি আপনাদেরকে সঠিকভাবে ধারণা দিতে পেরেছি।
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় জিরা পানি আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে তাই আপনি চাইলে আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেতে পারেন। অনেক উপকৃত মিলবে।
আশা করি আর্টিকেল থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। লাগলে অবশ্যই আপনার মতামন কমেন্ট করে জানায় দিবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অসাধারণ লিখা👌
আশাকরি আমার মত হাজারো মানুষ আপনার এই সুন্দর আর্টিকেল থেকে উপকৃত হবেন।
ধন্যবাদ ,আসা করি এই ভাবে পাশে থাকবেন।