শিশুদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
শিশুদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্ককে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। ছাগলের দুধে অনেক পুষ্টি ও গুণ রয়েছে। তবে কম বেশি সবাই ছাগলের দুধ খেতে পছন্দ করে। তবে শিশুদের জন্য ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে তেমন অনেকেরই ধারণা নাই। তাই আজকে আমি এ আর্টিকেল থেকে সঠিকভাবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তাই এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনি যদি এ আর্টিকেলটি পড়তে আগ্রহী হন। তাহলে শিশুদের জন্য ছাগলে দুধের উপকারিতা, ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম, ছাগলের দুধের উপকারিতা, ছাগলের দুধের দাম কত, ছাগলের দুধে এলার্জি আছে কিনা, ছাগলের দুধের অপকারিতা, এসব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
আমাদের খাদ্য তালিকায় দুধ খুবই প্রয়োজনীয় একটি খবার।যা আমাদের শরীরে পুষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যার চাহিদা কম বেশি সবারই রয়েছে। এবং দুধ থেকে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে ছাগলে দুধে বেশি পুষ্টিকর পাওয়া যায়। ছাগলের দুধের যেকোনো তৈরি খাবার শিশুদের জন্য বেশ উপকারী।
বিশ্বে যে পরিমাণে দুধ ও দুধের খাবার বিক্রি করা হয়ে থাকে তারা প্রায় ৬২ /৭২ শতাংশে ছাগলের দুধের তৈরি হয়ে থাকে। যেগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাগলের দুধ পাওয়া যায়। তার কারণ হচ্ছে গরুর থেকে ছাগল পরিচর্যা ও পোষা অনেকটাই সহজ। এই কারণে খুব সহজেই ছাগলের দুধ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এ দুধে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা শিশুদের জন্য বেশি উপকারী।
ছাগলের দুধ খাওয়ার নিয়ম
ছাগলের দুধ ছোট থেকে বড় সবারই খেতে খুব পছন্দ করে। যেমনি খেতেও সুস্বাদু ও শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে ছাগলের দুধ গরু দুধের থেকে একটু বেশি ঘন ও মোটা হয়ে থাকে। তাই ছাগলের দুধের সাথে পরিমাণ মতো কিছুটা পানি মিশ্রণ করে পাতলা করে সদ্যেজাদ শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এটি মায়ের বুকের দুধের মতো বেশ উপকারী।
ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুনে ভরপুর যা শিশুদের হাড় ও শরীরের গঠন মজবুত করতে বেশ সাহায্য করে থাকে।
ছাগলের দুধের উপকারিতা ত্বকের যত্নে
ছাগলের দুধ শুধু স্বাস্থ্যের জন্য না, আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের পাশাপাশি রূপচর্চার বেশ অতুলনীয়। তবে এই দুধ দিয়ে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারবেন খুব সহজে। ছাগলের দুধ আপনি ফেসপ্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন অথবা ক্লিনজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটিতে ত্বক সতেজ ও ত্বকের বলি রেখা দূর করতে সহায়তা করে। অনেকের ছাগলের দুধের স্বাস্থ্যের উপকারিতা শুনেছেন বা পড়েছেন। তবে ত্বকের জন্য কতটা উপকারী আপনি তা শুনলে অবাক হবেন। তাহলে আসুন আর দেরি না করে জেনে নিন ছাগলের দুধ চকচকে ত্বকের জন্য কতটা উপকারী।
ত্বক নরম হয়ঃ আমাদের অনেকেরই ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে,এমনকি তোকে আদ্রতা ভাব থাকে না। সেজন্য ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখতে ছাগলে দুধের অতুলনীয় যা বহু বছর ধরে এর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দুধ আমাদের ত্বকে কয়েক মিনিট ধরে রাখলে এটি খুব ভালো কাজ করে। এ দুধ ত্বকে লাগালে খুব চকচকে নরম ও সতেজ হয়ে উঠবে। ছাগলের দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড। অতএব বিশেষজ্ঞরা জানান যে ছাগলের দুধের সবথেকে বড় সুবিধাজনক হলো ছাগলে দুধের পিএইচ রয়েছে। যার কারনে এটি ত্বকে লাগালে ত্বকের মাইক্রোবায়োমের ক্ষতি হয় না।
সিরামাইড রোলঃ বিভিন্ন সময় দেখা যায় ত্বকের কোষগুলির মধ্যে পরিমাণটা অনেকটা ভালো থাকে, ত্বক আরো স্বাস্থ্যকর কিছু দৃষ্টিনন্দন দেখায়। কারণ এতে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বকে প্রাকৃতিক ইিউমেট্যান্ট হিসেবে ভালো কাজ করে থাকে। যার ফলে এটি ত্বকের আদ্রতা বাড়াতে সহায়তা করে।
ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা পুষ্টিগুণ জেনে নিন
দুধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পুষ্টির চাহিদা মিটাই থাকে। কারণ দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। দুধ উষ্ণ গরম করে তার সাথে চিনি বা মধু মিশ্রণ করে যদি পান করা হয় তাহলে আমাদের শরীরের পেশিও মস্তিষ্কে গ্রোথ বাড়িয়ে তুলে।কারণ দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুন ও ভিটামিন এ ভরপুর যে আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখে এবং সুস্থ রাখে।
শিশু থেকে বড় এবং সব বয়সে মানুষের জন্য দুধ খুবই উপকারী। দুধ আমাদের হাড়ের জন্য খুবই কার্যকারী। তবে গরুর দুধের থেকে ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ একটু বেশি। ছাগলে দুধের ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকলেও প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণটা রয়েছে অনেক বেশি।
এক গ্লাস ছাগলের দুধে রয়েছে
- প্রোটিন - ১০ গ্রাম -২৭ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল -১১ গ্রাম কার্বন।
- চর্বি - ৬ গ্রাম - প্রায় ১৭০ -ক্যালরি রয়েছে।
তাছাড়াও রয়েছে সেলেনিয়াম, জিংক, ফসফরাস, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি ইত্যাদি আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী।
ছাগলের দুধের উপকারিতা
ছাগলের দুধ কমবেশি সবাই খুব পছন্দ করে। এবং শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। এতে ক্যালোরি, প্রোটিন আর পেটের ফ্যাটের একটু দারুণ উৎস। যার ফলে আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্যর জন্য যে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন তা বেশির ভাগ আসে ছাগলের দুধ থেকে। আমাদের শরীরের ও স্বাস্থ্যের জন্য দুধের ভূমিকা অনন্য। আমাদের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক গ্লাস দুধে যথেষ্ট। তবে আমরা সবাই ছাগলের দুধ খেয়ে থাকলে ও ছাগলের দুধের উপকারী সম্পর্কে অনেকেই তেমন ধারণা নাই। চলুন জেনে নেওয়া যাক ছাগলের দুধের উপকারিতা।
বিভিন্ন রোগে ছাগলের দুধঃ আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগ লেগেই থাকে। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছাগলের কাচা দুধ আমাদের শরীরের জন্য বেশ কার্যকারী। এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এই ছাগলের দুধ বেশ সাহায্য করে। তাছাড়াও এটি শরীরের অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ছাগলের কাঁচা দুধ বেশ উপকারী। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিবডি ক্ষমতা। ছাগলের দুধ আমাদের শরীরে জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভের প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে বলা হয়ে থাকে।
গরুর দুধের বিকল্পঃ গরুর দুধের বিকল্প হিসেবেও আপনি গ্রহণ করতে পারেন কারণ বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর এই গরুর দুধে।অর্থাৎ ছাগলের দুধ স্বাস্থ্যের জন্য উন্নতিতে এটি বেশ কার্যকরী। বিভিন্ন খাবার থেকে যে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে এ ছাগলের দুধ। তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
শিশুদের জন্য উপকারীঃ ছাগলের দুধে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকরচর্বি, ভিটামিন, আয়রন ও আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পাওয়ার হাউজ বলা হয়ে থাকে। কারণ এতে উচ্চ তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে দাঁত ও হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তাই এটি শিশুদের দেহের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি যোগায় থাকে। এটি শিশুদের জন্য বেশ উপকারী ছাগলের দুধ।
ছাগলের দুধের দাম কত
বর্তমান সময়ে ছাগল ও গরুর দুধ দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। লিটার প্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ছাগলের দুধ অনেকে বিক্রি করছেন। কারণ অনেক কোম্পানি এ সুযোগ পেয়ে বড় ব্যবসা খুলে বসেছে। বর্তমান সময়ে অনলাইনে এ ছাগলের দুধ বিক্রি করা হয়। তবে ডেঙ্গুর সাথে এই ছাগলে দুধের কি সম্পর্ক।
আমরা অনেকেই জানি ছাগলের দুধ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পুষ্টিকর। তবে এটি সহজপাচ্যও বটে। তাই এটি গ্রহণ করলে খুবই দ্রুত ভাবে প্লাটিলেট বাড়ে। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সেসব রোগীদের ছাগলের দুধ খাওয়ানো হয়। তবে অনেক চিকিৎসকরা এটি ভুল বলে জানাচ্ছেন।
কারণ একটি কোম্পানি তারা দাবি করেন যে ছাগলের দুধের পাউডার ১০০% খাঁটি হয়ে থাকে যা প্রাকৃতিক সম্পন্ন তাজা ও নৈতিকভাবে সংগ্রহ করে এই দুধ থেকে এটিকে পাউডার বানানো হয়ে থাকে। তবে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ মিল্ক পাউডার মিশ্রণ করে নিলেই হবে।
সংস্থার দাবি তারা জানান যে ছাগলের দুধে প্রাকৃতিক ভাবে প্রিবায়োটিক রয়েছে । কারণ একটি সহজপাচ্য।তাছাড়াও ছাগলের দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম। যার ফলে রক্তের প্লেটের সংখ্যা বাড়াতে একটি সাহায্য করে থাকে।
ছাগলের দুধে কি এলার্জি আছে?
ছাগলের দুধ ও গরুর দুধ উপকারিতা প্রায় কিছুটা সমান। তবে ছাগল দুধের ফ্যাটের পরিমাণটা অনেকটাই কম, কিন্তু প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণটা রয়েছে অনেক বেশি। পুষ্টির দিক দিয়ে যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে গরুর দুধের তুলনায় ছাগলের দুধের পুষ্টি ও গুন অনেক বেশি। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত ছাগলের দুধে কোন এলার্জি পাওয়া যায়নি তবে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে ছাগলের দুধ খেলে এলার্জি হয় কিনা?
তবে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে তাদের অনেক খাদ্য থেকে এলার্জি হয়ে থাকে। তবে প্রথমে আপনাকে ছাগলের দুধ খেয়ে দেখতে হবে, এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা, যদি সমস্যা না দেয় তাহলে আপনি খেতে পারেন। আর যদি ছাগলের দুধ খেয়ে আপনার এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ছাগলের দুধের অপকারিতা
ছাগলের দুধ শিশুদের জন্য বেশ উপকারী, তবে যে সকল শিশুরা মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি যদি ছাগলের দুধ খাওয়ানো হয় তাহলে মায়ের বুকের দুধের উপর থেকে টান কমে যাবে। যার ফলে শিশুর বিভিন্ন ধরনের রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ছাগলের দুধ পান করলে আমাদের শরীরে ক্ষতি হতে পারে। তবে ছাগলের দুধ খেয়ে যদি আপনার শরীরে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ছাগলের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিন।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা জনপ্রিয়ঃ আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পদ্ধতিতে এটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানান যে ছাগলের দুধ সহজপাচ্য তাই শরীরে ক্লান্তি ও পুষ্টি চাহিদা মিঠাই খুব সহজে। এবং এই দুধ সহজ পাচ্য কারণে খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। তাছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর ক্ষেত্রে এর দুধ খুবই উপকারী। তবে এ সকল রোগের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছাগলের দুধ পান করা আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা উপর থেকে শিশুদের ছাগলের দুধের উপকারী সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশা করি আপনাদেরকে সঠিক ভাবে ধারণা দিতে পেরেছি।
আশা করি এ আর্টিকেল থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্ট করে জানাই দিবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url