গরুর মাংস উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। গরুর মাংস খেতে পছন্দ করো না এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর। ছোট থেকে বড় সবাই গরুর মাংস খেতে ভালোবাসে। তবে গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তেমন অনেকেরই ধারণা নাই। তাই আজকে আমি আর্টিকেল থেকে সঠিকভাবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়তে আগ্রহী হন। তাহলে গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা, গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ, গরুর মাংসের প্রোটিনের পরিমাণ কত? গরুর মাংসে কি এলার্জি আছে? , অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কি হয়? ইত্যাদি এসব সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
পবিত্র ঈদুল আযহা গরু অথবা খাসি কুরবানী দেওয়া হয়। তিন ভাগের দুই ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়ার পরেও থাকে একভাগ। এই কুরবানীর মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সুস্বাদ ও মজাদার খাবার। সেসব খাবার থেকে লোভ সামলানো নিজেকে দূরে রাখা খুবই মুশকিল।তবে অনেকে আছেন যারা ক্ষতিকর মনে করে গরুর মাংস খেতে ভয় পাই। তবে আসলেই কি গরুর মাংস ক্ষতিকর? এছাড়াও গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পুষ্টি ও উপাদান। যেমন প্রোটিন,জিংক, ভিটামিন বি ১২, সেলোনিয়াম, আয়রন ফসফরাস, নায়াসিন এবং ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদি, পাশাপাশি আরো রয়েছে গরুর মাংসের কিছু ক্ষতিকর দিকও। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ
গরুর মাংসের উপকারিতা প্রচুর পরিমাণ এবং তার পাশাপাশি গরুর মাংস রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।
- গরুর মাংসের রয়েছে উন্নত মানের প্রোটিন ও মাংসপেশি যা গঠনে সহায়তা করে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমাইনো এসিড প্রয়োজন। এবং এই সবগুলো এমাইনো এসিড গরো মাংসে রয়েছে।
- তাছাড়াও গরুর মাংস রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন যা রক্তস্বল্পতার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। তার পাশাপাশি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
- গরুর মাংস রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের প্রধান উৎস।যেমন ভিটামিন বি ১২, বি৬ রয়েছে গরুর মাংসের। যার ফলে নার্ভ সিস্টেমকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- আয়রনের পাশাপাশি গরুর মাংসের আরও রয়েছে কিছু প্রয়োজনীয় মিনারেলস। যেমন জিংক, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম , পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। যা আমাদের শরীরে মিনারেলস এ ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরের কোষ ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গরুর মাংসের প্রোটিনের পরিমাণ কত?
মূলত মুরগি এবং গরুর মাংস উভয়ের ভিতরে প্রোটিনের ভালো উৎস। তবে গরুর মাংসে প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিনের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায় । যেমন রান্না করা মুরগি সাধারণত ১০০ গ্রামে প্রায় একটি ৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে বললেই চলে। অন্যদিকে রান্না করা চর্বিহীন গরুর মাংস প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা
গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর। কারণ ছোট থেকে বড় সবাই গরুর মাংস খেতে খুব পছন্দ করে। গরুর মাংস দিয়ে তৈরি যে কোন খাবার সবাই খেতে খুব ভালোবাসে। চলুন জেনে নেওয়া যায় গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা।
শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়কঃ গরুর মাংস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ভিত্তিক গঠন ও শারীরিক বন্ধন ও রক্ত এসবের খুব ভালোভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৮৫ গ্রাম গরুর মাংস রয়েছে, ৯-১৪ বছর বয়সী যেসব শিশু তাদের দৈনিক চাহিদা পূরণ করে থাকে।
- ভিটামিন বি ১২- ১২৫ শতাংশ
- প্রোটিন - ৯০ শতাংশ
- আয়রন -৩২ শতাংশ
- নায়াসিন- ২৯ শতাংশ
- জিংক - ৭৪ শতাংশ
- সেলেনিয়াম - ৪২ শতাংশ
- ফসফরাস -১৬ শতাংশ
- ভিটামিন বি ৬-৩২ শতাংশ
খনিজের অভাব দূর করেঃ আমাদের শরীরে বিশেষ করে খনিজের অভাব সৃষ্ট অসুখ বিসুখ দূর করতে বেশ কাজ করে থাকে এই গরুর মাংস। এবং এটি খনিজ লবণের জন্য খুবই দুর্দান্ত একটি উৎস।তাছাড়া গরুর মাংস হয়েছে জিংক, ফসফরাস, স্যালানিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে লহৌ। গরুর মাংস ভিটামিন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস। তাছাড়াও গরুর মাংস আরও রয়েছে ভিটামিন বি৩ ভিটামিন বি ৬ ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদি,যা ভিটামিনের যোগান দিয়ে থাকে।
প্রোটিনের ভালো উৎসঃ গরুর মাংস প্রোটিনের প্রধান একটি ভালো উৎস। গরুর মাংস ছাড়াও গরুর বিভিন্ন অংশ যেমন হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি এসব থেকেও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এ প্রোটিন থেকে পাওয়া যায় অ্যামাইনো এসিড। যার ফলে হাড় ও মাংসপেশি ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া প্রতি 100 গ্রাম গরুর মাংসের রয়েছে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন। যা আমাদের শরীরের বেশ উপকারী।
জিংকের ঘাটতি দূর করেঃ আমাদের শরীরের রোগবালাই দূর হতে, এবং সুস্থ থাকার জন্য জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।এবং এটি আমাদের শরীরের কোর্স ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ৮৫ দাম গরুর মাংস খেলে তা দৈনিক জিংকের ২৯ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
গরুর মাংস খেলে কি ওজন বাড়
আপনারা হয়তোবা অনেকেই জানি গরুর মাংস উপকারিতা সম্পর্কে।তবে হ্যাঁ অবশ্যই, আপনি যদি গরুর মাংস সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন খেয়ে ওজন কমাতে পারবেন। অতএব সে ক্ষেত্রে মাংসের পরিমাণটা ভালো রাখতে হবে। তার পাশাপাশি মাংসের অতিরিক্ত চর্বি গুলো ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে। কারণ মাংস রয়েছে প্রোটিন যা আমাদের শরীরে জমা থাকে না। মাংসের সাথে চর্বি ও মাংসের তেল এগুলো জমা থাকে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি করে থাকে।
তাছাড়াও অথবা খাসির মাংস যেকোন ভুনা জাতীয় খাবারে জমে থাকে তেল যা এতে অতিরিক্ত ক্যালরি। তার সঙ্গে যদি প্রয়োজনীয় বেশি ভাত অথবা পরোটা, লুচি পুলাও, বিরানি তেহেরি, ভাজাপোড়া ইত্যাদি বেশি খাবার খাওয়া হয় তাহলে ওজন বাড়বে। তবে একটি সচেতন অনুযায়ী খাবার পরিমাণটা ঠিক রেখে খেলে ওজন কমানো যায়।
গরুর মাংস কি এলার্জি আছে?
হ্যাঁ অবশ্যই, গরুর মাংস অনেকেরই এলার্জি রয়েছে। যাদের এলার্জি রয়েছে তারা অনেকেই গরুর মাংস, বেগুন, ইলিশ, চিংড়ি, মাছ ইত্যাদি এসব খাবার বন্ধ করে দেন। তবে অনেক মানুষেরই সব খাবারে এলার্জি হয় না।গরুর মাংস খাওয়ার ফলে যদি, চুলকানি হয়, নাক বন্ধ হয়ে পানি পড়ে, তোকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে বুঝবেন গরুর মাংসে আপনার এলার্জি রয়েছে। তবে অনেক মানুষেরই গরুর মাংস খাওয়ার ফলে এলার্জি হয়ে থাক। তাছাড়াও গরুর মাংস উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।
অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কি হয়?
অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে, শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কি হয়?
- ১। অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ঝুঁকি বাড়ায়।
- ২। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো সমস্যা জনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
- ৩।কিডনি ও ক্যান্সার রোগে ঝুঁকি বাড়ায়।
- ৪। যারা ৫০ গ্রামের চেয়েও বেশি মাংস খেয়ে থাকেন তাদের হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং তার পাশাপাশি ডায়াবেটিস হতে পারে।
- ৫।অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে।
গরুর মাংসের অপকারিতা
গরুর মাংস উপকারিতা যেমনি রয়েছে, তেমনি অপকারিতা রয়েছে। তবে প্রত্যেকটা কিছুরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর মাংসের অপকারিতা।
কোষ্ঠকাঠিন্যর ঝুঁকে বাড়ায়ঃ অনেক মানুষ আছেন গরুর মাংস লোভ সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য ঝুঁকি বাড়ে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আস্তে আস্তে আরো বড় ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তাছাড়াও আপনি যদি গরুর মাংসের সাথে নানা ধরনের সবজি মিশিয়ে খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, গরুর মাংস অতিরিক্ত খাওয়া মোটেও শরীরের জন্য উপকারী নয়। তাই যতই খেতে ভালো লাগুক না কেন পরিমাণ মতো গরুর মাংস খেতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহের ৪-৫ পাঁচ বেলা গরুর মাংস খাওয়া হলে তার পাশাপাশি খাসি অথবা ভেড়ার মাংস খেলে কোলন ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।তার সাথে যদি প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খাওয়া হয়, তাহলে মৃত্যু ব্যাধি ঝুকি বাড়িয়ে দেয়।
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুকিঃ গরুর মাংস অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। তার কারণ হচ্ছে এতে রয়েছে পরিমাণের সোডিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এবং এই রক্তচাপ সৃষ্টি অথবা বাড়াতে কাজ করে থাকে সোডিয়াম। যার ফলে গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ। অতএব সেখান থেকে দেখা দিয়ে থাকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো সমস্যা জনিত।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা উপর থেকে গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশা করি আপনাদেরকে সঠিকভাবে ধারণা দিতে পেরেছি।
এতক্ষণে জানতে পেরে গেছেন গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তবে গরুর মাংসের উপকারিতা থাকলেও এর কিন্তু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উচিত নয়। যারা গরুর মাংস খেতে ভালোবাসে লোভ সামলাতে পারে না, তারা পরিমাণ মতো গরুর মাংস খেতে পারেন।
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানায় দিবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url