মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানুন

মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব। আর আমাদের জীবন চলার পথে নানাভাবে অনেক সময় ঘাত প্রতিঘাত পরিবেশে মোকাবেলা করতে হয়। যার ফলে এগুলোর জন্য শারীরিক ভাবে অসুস্থতার পাশাপাশি আমরা অনেক সময় মানসিকভাবে ও ক্ষতিগ্রস্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানুন
আমরা অনেকে শারীরিক স্বাস্থ্যর প্রতি সচেতন হলেও মানুসিক স্বাস্থ্যর কথা খেয়াল রাখি না।আর মানুসিক শান্তি না থাকলে, কোন কিছু করে শান্তি পাওয়া যায় না । তাই আমাদের শারীরিক ও মানুসিক দুটোই ঠিক রাখতে হবে কিন্তু উভয় ধরনের সুস্থতা আমাদের প্রয়োজন।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে যে আর্থ সামাজিক অবস্থা,মানসিক চাপ বংশগতি ও অন্যান্য মনো সামাজিকের কারণে দেশের দিন দিন প্রতিনিয়ত মানসিক রোগের প্রকোপ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অনেক মানুষ আছে যে মানসিক সমস্যাকে রোগ মনে করে না, এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না, এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে চান না,যার ফলে মানসিক সমস্যাগুলো ভিতরে ভিতরে আরো বেশি বাড়তে থাকে। একটা মানুষ তখনই সুস্থ বলা হয় যখন তার শারীরিক ও মানসিক দুইটাই পরিপূর্ণভাবে সুস্থ থাকে। একজন মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে হবে না মানসিকভাবে অসুস্থ থাকতে হবে। যদি মানুষিক ভাবে অসস্থি বোধ করে থাকেন ,এবং মানুষিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুজছেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এটি পরলে আপনি সকল কিছু জানতে পারবেন।

মানসিক রোগ কি

মানসিক রোগ হচ্ছে কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণ ও তার জীবন যাপনের কিছু চিত্র। তাছাড়াও মানুষ অনেক ক্ষেত্রে নানা রকম মানসিক চাপে এবং অস্থিতে ভোগেন যার ফলে বিচলিত হয়ে পড়েন। তবে এটি সাধারণত ঘটে থাকে মস্তিষ্কের রোগের কারণে। এবং একজন মানসিক রোগী, নিজের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবন অব্যাহত হয়। এসব নানা কাজের চাপের মাধ্যমে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। যার ফলে এ রোগ গুলো দেখা দেয়। মানসিক রোগ মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।আসুন জেনে নেওয়া যাক।

  • নিউরোটিক
  • সাইকোসিস
নিউরোটিকঃ নিউরোটিক এ ধরনের মানুষগুলো হয়ে থেকে সাধারণত দুশ্চিন্তাশিল,অস্বাভাবিক রাগ, ইন্টারনেট ও মাদকাশক্তি, প্যানিক, যৌন সমস্যা, আরো নানা কারণে এ ধরনের মানসিক রোগীর সংখ্যা তুলনা মূলক ভাবে অনেক বেশি।


সাইকোসিসঃ সাইকোসিস হচ্ছে এটা সবথেকে গুরুতর মানসিক সমস্যা। এবং সিজোফ্রেনিয়া বাইপলার মুড ডিসঅর্ডার, ইত্যাদি নানা কারণে সাইকোসিস মেন্টাল ডিজ অর্ডার হয়ে থাকে।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এই রোগের শিকার। তবে মানসিক রোগের প্রকৃত কারণ এর সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞ জানান যে এটি মূলত কয়েকটি কারণে মানুষের রোগের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো হচ্ছে জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা, যৌন সমস্যা, নির্যাতন, অস্বাভাবিকভাবে শিশুর লালন-পালন, দীর্ঘমেয়াদি অস্বাভাবিক চাপ এবং ইন্টারনেট যুক্ত সহ নানা নেশা দ্রব্যের প্রতি অধিক আগ্রহ মস্তিষ্কের গঠনজনিত সমস্যা এসব মানসিক রোগের লক্ষণ।

কিভাবে বুঝবেন আপনি মানসিক রোগে অসুস্থ?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মেখলা সরকার বলেছেন যে যখন কোন ব্যক্তির আচরণের পর বড় ধরনের কোন লক্ষণ পরিবর্তন দেখা যায় বিশেষ করে আবেগ প্রকাশের কিছু পরিবর্তন আসে। এবং আস্তে আস্তে দৈনন্দিন এর কর্মকাণ্ডে তার প্রভাব ফেলে থাকে। তখন বুঝবে হবে সে ব্যক্তি মানসিক রোগে অসুস্থ।


মানসিক রোগের কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলোঃ 
  • হঠাৎ হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়া উত্তেজিত হয়ে যাওয়া
  • নিজেকে একা রাখা। এবং অন্যদের সঙ্গে এড়িয়ে চলা।
  • সবার সাথে ঝগড়া করা এবং তর্ক বিতর্ক করা
  • অনেকদিন যাবত নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা।
  • নিজের প্রতি উদাসীন হওয়া, এবং নিজের শারীরিক যত্ন না নেওয়া।
  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • যেকোনো সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিছিন্ন রাখা।
  • পেশাগত যে কোন কাজে অনিহা তৈরি হওয়া।
  • এবং সময় মত না ঘুমানো এবং ঘুমের পরিমাণটা কমে যাওয়া।
  • কোন কারন ছাড়াই অন্যদেরকে সন্দেহ করা।

মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়

প্রাকৃতিকভাবে এই প্রত্যেকটা মানুষেরই ও কম বেশি প্রাণীর মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। তবে এটি ব্যক্তি ভেদে প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। অনেকেরই রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। আবার অনেকেরই ক্ষেত্রে কিছুটা কম। কিন্তু সবার মাঝেই এটি রয়েছে।

এবং নানা রকম ভাবে আমাদের শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে রোগ প্রতিরোধ বলা হয়ে থাকে। তবে এটি মানুষের জৈবিক গঠন, মানসিক গঠন এবং তার মনদৈহিক প্রক্রিয়ার উপরে নির্ভর করে থাকে।

মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায় সম্পর্কে নীচে দেয়া হলো।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃ আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই প্রয়োজন। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভাবে মানুষ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে। যার ফলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের শারীরিক ও মানসিক দুটোই সুস্থ রাখতে পর্যন্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদ দূর হবে।

নিজেকে হাসিখুশি রাখাঃ একাকীত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। তাই মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করতে হবে আমাদের সবসময় সবার সাথে হাসিখুশি থাকা এবং মিলেমিশে আনন্দে থাকা। এবং সবার সাথে হাসি খুশি থাকলে আপনাকে মানসিকভাবে তৃপ্তি দিবে এবং অন্যান্য চিন্তা থেকে বিচলিত হবে না। এবং আপনি তার প্রতিকুল অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক রোগ হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে মধ্য দিয়ে পথ চলার একটি অন্যতম অন্তর্ভুক্ত। যার ফলে এটি আমাদের দৈনন্দিন ও আনন্দের মুহূর্ত গুলো নষ্ট করে ফেলে। তাই মানুষের রোগ থেকে মুক্তার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

  • যে কোনো অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেওয়া। (এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ)
  • যে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা।
  • পুষ্টিকর ও সুষম জাতীয় খাবার খাওয়া।
  • নিয়মিত ও সময় ধরে পরিমাণ মতো ঘুমানো।
  • এবং ধর্মীয় কাজের মনোনিবেশ করা।
  • নিয়মমাফিক অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
  • বন্ধুবান্ধব ও আপনজনদের সাথে মেলামিশা করা, এবং আনন্দে থাকা।
  • সবার সাথে আনন্দ ও হাসিখুশি থাকা।
  • ১এবং ধুমপান ও মাদক থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ

অধ্যাপক ডাঃ মেখলা সরকার জানিয়েছেন যে মানসিক রোগ হলে তার অনেকগুলো শারীরিক কিছু প্রভাব দেখা দিয়ে থাকে। যেমন হলো, মাথা ব্যথা করা, বুকে ব্যথা করা, শ্বাস সমস্যা দেখা দেওয়া, খাবারের প্রতি অনিহা বা দুর্বলতা ইত্যাদি আরও উপসর্গ দেখা যায়।তবে এসব রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরও যদি, এসব সমস্যা দেখা যায় তাহলে তার শারীরিক কোন সমস্যা নেই, এবং তারপরও তিনি এরকম সমস্যাই ভুগে থাকেন।


মানসিক রোগের নাম

মানসিক রোগের কিছু নাম দেওয়া হলো
  • অ্য্যাংজাইটি
  • বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার
  • সাইকোসিস ডিজঅর্ডার
  • প্যানিক অ্যাটাক
  • ফোবিয়া
  • কনভারশন ডিজঅর্ডার
  • পোস্ট ট্রামটিক
  • হেলথ অ্য্যাংজাইটি
  • ওসিডি
  • সিজোফ্রেনিয়া

লেখকের মন্তব্য

আমরা উপর থেকে মানসিক রোগের মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আমাদের শারীরিক ও মানসিক দুটোই সুস্থ রাখতে হবে। আসলে আমরা অনেকে আছি যে শারীরিক সুস্থ থাকলো ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে যায়। তাই নিজেকে ভালো ও সুস্থ রাখতে শারীরিক ও মানসিক দুটোই ভালো রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url