করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। করলা এমন একটি সবজি যা খেতে অনেক তিতো। তিতো স্বাদ বলে অনেকে দূরে থাকেন, আবার অনেকে এ সবজি খেতে খুব ভালোবাসেন। এবং এটি স্বাদে যত হোক না কেন উপকারিতা কিন্তু অনন্য।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে এই সবজি। আমরা কম বেশি সবাই করলা খেয়ে থাকলে। করলা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। আসুন এখান থেকে জেনে নেওয়া যাক করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
করলা হচ্ছে এক প্রকার জাতীয় সবজি। করলাতে রয়েছে ব্লাড সুগার যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করার উপাদান। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে সেসব রোগীদের জন্য করলা হতে পারে উপকারী একটি সবজি। অতএব আপনি যদি মধু পানির সঙ্গে কোলার রস মিশিয়ে খেলে মুক্তি পাবেন অ্যাজমা, ব্রস্কাইটিস , শ্বাসরোধ ও গলার প্রদাহের মত সমস্য জনিত রোগ থেকে।
করলা তিতো হলো ও অনেকেরই প্রিয় এই সবজি। এবং এটি রুচিবোর্ধক সবজি। এবং এই করলা দ্বারা ভাজি, ভর্তা ব্যঞ্জনে করলার অনেক কদর। তবে চিংড়ি সহযোগী ভাজি, ডালের সঙ্গে রান্না এবং মুচমুচে করে ভাজা যেভাবেই হোক না কেন করলা খুব স্বাদের। গরম ভাতে যদি আলু ও করলা ভাজি খাবারকে আনন্দদায়ক করে তোলে।
এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবজির উপকারী গুণ ও কম নয়। তাই আপনার খাদ্য তালিকা নিয়মিত কলা রাখতে পারেন এবং পড়লার ঔষুধি গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না তাই নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই থেকে দূরে পালাবে।
খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা জানান যে, করলা মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা করলা রস অথবা জুস করে খেলে সবচেয়ে বড় উপকার পাওয়া যায়। তবে ভাজা অথবা সিদ্ধ করে খেলে সে উপাদানগুলো সঠিকভাবে আমাদের শরীরে পৌঁছায় না। তাই করলার জুস করে খালি পেটে খেতে বলেছেন পুষ্টিবিদরা।
খালি পেটে করলা জুস খেলে যেসব উপকার মিলবে
- শীতের মধ্যে অনেকেরই মিষ্টি, কেক এসবের খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়। যার ফলে রক্তের শতকরা মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে কলার জুস করে খেলে শতকরার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যার ফলের ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরটা অনেকটা সুস্থ ভালো থাকে।
- যারা রাতের বেলায় ভাঁজাপোড়া বেশি খেয়ে ফেলে তাদের সকালে উঠেই অনেক শরীর খারাপ হয়ে থাকে। করলা রস খুব তাড়াতাড়ি হজম করতে সহায়তা করে। তাছাড়াও করলার রস হজম শক্তি বাড়াতে এবং তার পাশাপাশি পেট পুরিস্কার রাখতে সাহায্য করে।
- আমাদের শরীর থেকে নানা দূষিত প্রদাথ বের করতে সহায়তা করে এই করলার রস। এছাড়াও রক্ত পরিষ্কার রাখে। আপনি যদি রোজ সকালে খালি পেটে করলার জুস এক গ্লাস পান করলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির আশঙ্কা কমে।
করলার জুস বানানোর নিয়ম
করলা ছোট ছোট ও টুকরো করে, ভালোভাবে কেটে নিয়ে এটার বীজগুলো ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে নিতে হবে। এবং ছাঁকনির সাহায্যে এটি ছেকে নিয়ে আলাদা করে পানির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তবে সাত বাড়ানোর জন্য লেবুর রস বা মধু এটার সাথে যোগ করতে পারেন। পোলার রস ব্ল্যাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলা তিতো স্বাদ হলো এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তবে এটা স্বাদ যত তিতো হোক না কেন উপকারিতার দিক থেকে এটি অনন্য। এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের শরীরকে সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক করলা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ গুলো।
হজম ভালো করেঃ অনেক মানুষই হজমের সমস্যায় ভুগেন। হজমের সমস্যায় এমন কোন মানুষ নাই যে ভুবেন না। এবং খাবারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে এরকম হতে থাকে।তবে আপনি যদি নিয়মিত করোলার রস অথবা করলা খান তাহলে হজম ক্ষমতা উন্নত হবে। কারণ হজমের ক্ষেত্রে দারুন ভাবে কাজ করে থাকে এই সবজি।এছাড়াও যদি কষ্ট করে একটু জুস বা রস খাওয়া যায় তাহলে তো কোন কথাই নাই। হজম সবার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে এতগুলো উপকার পাওয়ার জন্য একটু হলেও স্বাূ নেওয়া যায়।
সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রক্তের সুগারের মাএা নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। না হলে ডায়াবেটিসহ আরো বিভিন্ন সমস্যা ঘাড়ে নিশেষ ফেলতে শুরু করবে। অতএব আপনি যদি অতিরিক্ত সুগার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে অনেক খাবার আপনার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকবে। তবে আপনি যদি নিয়মিত করলার রস খেতে পারেন তাহলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হবে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভুগছেন, তারা নিয়মিত করলার রস খেতে পারেন। কারণ করলা রস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুন কার্যকরী এই সবজি।কারণ করলার ক্যালরি পরিমাণটা খুবই কম থাকে।সেই সাথে চর্বি ঝরাতে বেশ সাহায্য করে এই সবজি। তাই আপনি যদি নিয়মিত করলা রস খেতে পারেন তাহলে ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
ভালো রাখে লিভারঃ আমাদের সুস্থ রাখার জন্য লিভার ভালো রাখা অত্যন্ত জরুরি। তবে এই কাজে আপনাকে সহায়তা করতে পারে করলা। কারন লিভারের মধ্যে জমে থাকা যে টক্সিন থেকে বের করতে সহায়তা করে থাকে এই সবজির রস। করলাতে রয়েছে পুষ্টি ও গুন লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যার ফলে দূরে থাকে লিভারের নানা ধরনের অসুখ।
কাঁচা করলার উপকারিতা
কাচা করলা অনেক উপকারিতা রয়েছে। ১০০ গ্রাম কাঁচা কলার মজুত রয়েছে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম, নানাবিদ উপকারী ভিটামিন এবং মিনারেল ইত্যাদি সহ। যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। যা থেকে ছোট ও বড় কোনো রোগ এর ধারে ঘেঁষতে পারেনা। শুধু তাই নয় আরো অনেক উপকার মিলে। তা নিচে দেওয়া হলো কাঁচা করলার উপকারিতা গুলো।
ত্বকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়ঃ আপনি যদি ত্বক সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলময় করতে চান তাহলে আপনার ডায়েটে করলা কে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। কারণ এই করলাতে উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করার এমন কাজ করে যা বলি রেখা গায়েব হতে শুরু করে। এবং তার পাশাপাশি ত্বককে টানটান করে। যার ফলে স্ক্রিনে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। এবং করলায় মজুত রয়েছে ভিটামিন এ বায়োটিন এবং জিংক, যা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি ঘটেঃ প্রতিদিন আপনার ডায়েটে করলা কে যদি রাখেন তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যার ফলে নানাবিদ রোগের প্রকল্প নিমিষে হ্রাস পায়। তবে তার পাশাপাশি সংক্রমণ বা ইনফেকশন আক্রান্ত হওয়া থেকে আশঙ্কা ও কমে।
ক্যান্সারের মতো মরণ রোগ দূরে থাকেঃ করলার মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার সেল যাতে জন্ম নিতে পারে সেদিকে নজর রাখে। যার ফলে এই মরণবিধি রোগ থেকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।করলায় রয়েছে অ্যানিমিয়া যা উচ্চ রক্ত চাপের মতো রোগে চিকিৎসাতে এই সবজিটি খুব দারুন ভাবে সহায়তা করে থাকে।
করলার জুস খেলে কি ওজন কমে
করলার জুস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। এবং করলা জুস ফ্যাট সেল বার্ন করে এবং নতুন ফ্যাট সেল তৈরিতে বাধা সৃষ্টি দেয়। করলা জুস খাওয়ার ফলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।শুধু তাই নয় করলা জুস ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে থাকে। এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
করলা খাওয়ার অপকারিতা
এই তিতো করলা খেলে অনেক উপকারের কথা শুনেছেন। কিন্তু অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক করলা খাওয়ার অপকারিতা গুলো।
- গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এবং গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যাধিক। এবং পরিমাণে তিতা করলা খেলে মাসিকের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এবং গর্ভনির গর্ভনিরোধক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। অতএব খিচুনিতে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব না থাকে এইভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
- এবং ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য করলা বেশ উপকারী এবং এদের উচ্চ রক্ত শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। তবে যারা ডাইবেটিক রোগীদের জন্য আপনাদের যে নিয়মিত ওষুধের সাথে এই তিতা করলা গ্রহণ করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়া সম্ভাবনা থাকে। এটি এমন ভাবে আপনার শর্করা কমাবে যে আপনি কমায় চলে যেতে পারেন।তাই আপনি খুব সাবধানতা অবলম্বন করে একটি করলার চারভাগের এক ভাগ জুস করে খেতে পারেন।
- করলা অথবা করলার রস যদি শিশুরা খেয়ে থাকে। তাহলে পেটে ব্যথা, বমি ও পেট ফাঁপা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এটি শিশুদের জন্য বিষ ক্রিয়া করে।
- লিভার ইনফ্লামেশন হতে পারে। এবং আমাদের শরীরের রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খরচ কম। গবেষণায় দেখা যায় যে, অতিরিক্ত তিতা করলা খাওয়ার ফলে এনজাইমকে উন্নত করে এবং লিভারের প্রদাহ ও সৃষ্টি করতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আমরা উপর থেকে করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। ওরা খাওয়ার বহু উপকারিতা রয়েছে। যারা করলা খেতে পছন্দ করেন না এবং তুই তো মনে করে খান না, তাদের জন্য এটি দুঃখজনক। কারণ করলা কি তো হলো এর উপকারিতা প্রচুর যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ কার্যকরী। তাই আপনি যদি আপনার শরীর সুস্থ ভালো রাখতে চান এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে আপনার ডায়েটে করলা রাখতে পারেন। এতে করে আপনার অনেক উপকার মিলবে। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url