ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ এর মধ্যে পার্থক্য জেনে নিন
ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ সম্পর্কে আমার কম বেশি অনেকে জানি ।কিন্তু ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ সম্পর্কে পার্থক্য কয়জন জানি বলেন। তাই সর্বপ্রথম আমাদের ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ এর পার্থক্য জানতে হবে । কারণ এটা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় জিনিস , দেখে শুনে নিতে হবে । এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি কি রয়ছে তা সম্পর্কে জেনে নি।
ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ এর ভিতরে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই যখনই আমরা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কিনতে যাব অবশ্যই পার্থক্যগুলো সম্পর্কে জেনে নিব। কারন আমাদের পার্থক্য সম্পর্কে জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাপটপে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে সেগুলো জানা দরকার, তেমনি ডেক্সটপে কি কি সুবিধা রয়েছে বা অসুবিধা রয়েছে সেগুলো জানা দরকার। আসল তাহলে ল্যাপটপের ডেস্কটপের সম্পর্কে বিস্তারিত পার্থক্য গুলো সব জেনে নিন।
ভুমিকা
কম্পিউটার শব্দের অর্থ গননা করার যন্ত্র। অবস্থা ও বৈশিষ্ট ভেদে এটাকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। আকারের দিক থেকে কমপিউটারের প্রকারগুলো হলোঃ
- ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা মাইক্রোকম্পিউটার
- মিনিকম্পিউটার (মধ্যমসারির কম্পিউটার)
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- সুপার কম্পিউটার
ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মধ্যে আছে কয়েক প্রকার কম্পিউটার। যথাঃ
- ডেস্কটপ কম্পিউটার
- ল্যাপটপ এবং নোটবুক কম্পিউটার
- ট্যাবলেট কম্পিউটার
- স্মার্টফোন, স্মার্টবুক, পিডিএ এবং পামটপ কম্পিউটার
- প্রোগ্রাম সক্ষম ক্যালকুলেটর
- হ্যান্ডহেল্ড গেম কনসোল
ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ সম্পর্কে ধারণা
আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারনা আছে যে ডেস্কটপ কম্পিউটার দিয়ে যে কাজ করা যায় ল্যাপটপ দিয়ে হয়ত সেই সমস্ত কাজ করা যায়না। এই ভুল ধারনার কারণ হচ্ছে দুটির মধ্যে আকারের পার্থক্য ডেস্কটপ সাইজে অনেক বড় ও যন্ত্রপাতিও বেশি। কিন্তু ল্যাপটপ সাইজে অনেক ছোট এবং অতিরিক্ত কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াও এটি ব্যবহার করা যায়।
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সকল ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির মধ্যে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে এই ন্যনো টেকনোলজির উন্নতির ফলে বড় সাইজের যন্ত্রপাতিকে ছোট করা সম্ভব হচ্ছে এবং কাজের শক্তিও হাজার গুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারে যে সকল যন্ত্রপাতি থাকে ল্যাপটপেও সেই সমস্ত যন্ত্রপাতি থাকে কিন্তু সেগুলো সাইজে অনেক ছোট হয়।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের কিবোর্ড, মাউস, মনিটর, র্যাম, প্রসেসর, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, ইউএসবিপোর্ট আছে এবং ল্যাপটপ কম্পিউটারের মধ্যওে এই একই জিনিস রয়েছে। ডেস্কটপ কম্পিউটার দিয়ে যেই সমস্ত কাজ করা যায় ল্যাপটপ দিয়েও সেই সমস্ত কাজেই করা যায়। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে দুইটির মধ্যে পার্থক্য কি?
ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে, একেকটির একেক রকম সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো মূল্যের দিক দিয়ে সাধারণত ল্যাপটপের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে।
কম্পিউটারের গতি বা কার্যক্ষমতা নির্ভর করে তার প্রসেসর ও র্যামের উপর। ভাল প্রসেসর ও র্যামের ল্যাপটপ কিনতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু একই কনফিগারেশন এর একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করলে ল্যাপটপের মূল্যের অর্ধেক টাকা দিয়েই ক্রয় করা সম্ভব।
আমার যখন কোনো ধরনের কাজ করব এবং কত সময় নিয়ে ধরে কম্পিউটার টাকে চালু রাখব এবং সেটার উপর নির্ভর করে থাকে ল্যাপটপ ভাল হবে না ডেস্কটপ। যারা শিক্ষার জন্য কম্পিউটার ক্রয় করতে চান তাদের জন্য সবচেয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার অনেক সুবিধা জনক কারণ যারা শিক্ষার জন্য কম্পিউটার ক্রয় করে তাদের বেশির ভাগ মানুষেই ষ্টুডেন্ট। শিক্ষা অবস্থায় কম্পিউটার এর উপর বেশি প্রেসার পড়ে না।
এবং আমরা যারা প্রফেশনাল ভাবে কাজ করার জন্য এবং কম্পিউটার ক্রয় করতে চান এবং তাদের বিশেষ করে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ভিডিও এডিটিং এর কাজের জন্য তাদের জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটারেই অনেক সুবিধা রয়ছে এতে। কারণ ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেক লংটাইম চালু রাখলেও কোন সমস্যা হয় না। অনেক কোম্পানি আছে যারা মাসের পর মাস বছরের পর বছর কম্পিউটার অন করে রেখেছে একবারও বন্ধ করেনি।
ডেক্সটপ এবং কম্পিউটার বড় হওয়ার সাইজে এবং সেটার কারণে খুব সহজে ঠান্ডা হতে পারে এবং ভিতরে বড় ও শক্তিশালী কুলিং ফ্যান ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য
- কম্পিউটার বহন করা যায় না।এবং কম্পিউটারের সব ধরণের কাজে পারফরম্যান্স করার এর দিক থেকে ল্যাপটপের তুলনায় থেকে ডেক্সটপে আরও দ্বিগুণ বেশি পরিমাণ পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে।
- ডেক্সটপে যেকোনো ধরনের ভারী কাজ করতে পারবেন। এবং ল্যাপটপে যেকোনো ভারী কাজ করলে অনেক সমসসা দেখা দিতে পারে এবং এতে ল্যাপটপ স্লো বা হ্যাং করতে পারে।
- ডেক্সটপের বড় সমস্যা হলো ডেক্সটপ হল বিদ্যুৎ ছাড়া ডেক্সটপ ব্যাবহার করা করা যায় না।এবং ল্যাপটপের বড় সুবিধা হল বিদ্যুৎ ছাড়া ও ল্যাপটপ ব্যবহার করা যায।
- ডেক্সটপ সব জায়গায় বহন করা যায় না। এবং বহন করা গেলেও তা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।এবং ল্যাপটপ যেকোনো জায়গায় খুব সহজেই বহন করা যায়।
- ডেক্সটপে বেশি সময় ধরে কাজ করা যাই এবং অনেকক্ষণ কাজ করলেও কোন ধরনের গরম হয় না তাই এর কাজের পারফরম্যান্স জন্য ডেক্সটপ অনেক ভালো থাকে । এবং ল্যাপটপে অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলেও প্রবলেম দেখা দেয়, এবং অল্প কাজে ল্যাপটপ গরম হয়। তাই এর কাজের পারফরম্যান্স একটু কমে যায়।
- ল্যাপটপের চেয়ে ডেক্সটপে এর কম খরচে ভাল কনফিগারেশন পাওয়া যায়।এবং এটি ডেক্সটপের তুলনায় থেকে ল্যাপটপ অনেক ব্যয়বহুল। এবং ভাল কনফিগারেশন পাওয়া যায় তার জন্য খরচ বেশি লাগে।
- এক্সেসরিজ ডেক্সটপের থেকে তুলনামূলক ভাবে ভালো।এবং তা খুব সহজেই পরিবর্তন করানো যায় যেমন: মাদারবোর্ড, প্রসেসর,।এবং আর রয়ছে, র্যাম, হার্ডডিস্ক, মনিটর, ইত্যাদি। এবং ল্যাপটপে বিভিন্ন এক্সেসরিজ তুলনামূলক ভাবে এবং খুব সহজেই পরিবর্তন করানো যায় না। যেমন: মাদারবোর্ড, প্রসেসর, মনিটর, ইত্যাদি।
ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধ
- দীর্ঘ সময় চালাতে পারবেন।
- পিসি গরম হবে না
- চালাতে বেশি ভালো মনে হয়
- আপনি প্রত্যেকটা পার্টস পাল্টাতে পারবেন।
- খারাপ হলে সার্ভিস চার্জ কম লাগবে ,এছাড়া আরো অনেক আছে।
ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহারের অসুবিধা।
- কম্পিউটার বহন করা যায় না
- wifi , ব্লটুথ, স্পিকার ইত্যাদি নিজে কিনতে হবে।
- দেখতে স্মার্ট না।
- অনেক জায়গা নিয়ে নেই।
ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যাবহারের সুবিধা
- যে কোনো জায়গায় বহন করতে পারবেন
- ওয়েবক্যাম সঙ্গে স্পিকার wifi , ব্লটুথ ইত্যাদি সঙ্গে পাবে।
- দেখতে ভালো লাগে।
- বেটারী পাবেন তার সঙ্গেই।
- ল্যাপটপ সহজে বহন করা যায়।
- ল্যাপটপের জন্য অনেক কম স্পেস লাগে।
ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যাবহারের অসুবিধা
- ল্যাপটপ নিজে কাস্টোমাইজ করতে পারবেন না।
- ল্যাপটপ বেশি চালালে গরম হয়ে যায়।
- খারাপ হলে সার্ভিসিং চার্জ অনেক লাগে।
লেখকের মন্তব্য
আপনি যদি একই কনফিগারেশনের একটি ল্যাপটপ এবং একটি ডেস্কটপ পাশাপাশি রেখে তাদের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করেন তাহলে দেখবেন যে ডেক্সটপের পারফরম্যান্স ল্যাপটপের প্রায় দ্বিগুণ। যদিও বা তাদের কম্পনেন্ট সেম। ল্যাপটপের কিছু ফিজিকাল ড্র-ব্যাক রয়েছে। যেমন ল্যাপটপ আপনি চাইলেও খুব সহজে আপগ্রেড করতে পারবেন না অপরপক্ষে ডেক্সটপ আপনি যখন খুশি তখনই আপগ্রেড করতে পারবেন।
পাওয়ার হাংরি কাজের জন্য ডেক্সটপ বেস্ট যেখানে ল্যাপটপ তার ধারের কাছেও যেতে পারবেনা। এছাড়া আমার কাছে ল্যাপটপের সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে তার হিটিং ইস্যু, ল্যাপটপ একটা ক্লোজড সিস্টেমের উপর বিল্ড হয় দেখে এর এয়ার ফ্লো খুব বাজে হয়, যার কারণে ল্যাপটপ খুব অল্পতেই গরম হয়ে যায়। যা কিনা পারফরমেন্সের জন্য খুব বাজে। আর ল্যাপটপের প্রসেসর গুলোর ক্লক স্পিড অনেক কম হয়।
এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে একটা প্রসেসর যত বেশি আউটপুট বা ক্লক স্পিড দিবে তার ঠিক ততো বেশি এনার্জির প্রয়োজন হবে। যেহেতু ল্যাপটপ ব্যাটারি চালিত তাই এর ক্লক স্পিড ইচ্ছে করেই কমানো থাকে যার ফলে প্রসেসরের ক্লক স্পীড অনেক কমে যায় এবং ব্যাটারি বেশি ব্যাকআপ দেয়। এটা পাওয়ার সেভিংস এর জন্য ভালো কিন্তু পারফরমেন্সের জন্য অত্যন্ত বাজে।
আশা করি আমার কথাগুলো আপনার উপকারে আসবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url