ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইলিশ বাঙ্গালীদের সবথেকে প্রিয় মাছ।এবং বাঙালিরা খুব পছন্দ করে ইলিশ মাছ খেতে। ইলিশ মাছে অতিরিক্ত কাটা থাকার ফলেও ছোট থেকে বড় সবাই খেতে ভালোবাসে। এবং এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
এবং ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করেনা এরকম মানুষ পাওয়া খুব দুষ্কর। ইলিশ মাছের নাম শুনলে। জিভে জল চলে আসে। সবাই এ মাছটি পছন্দ করে থাকলো এটা উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানেনা আসুন আমরা ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
ভূমিকা
বাঙালিরা মজা করে ইলিশ মাছ খেয়ে থাকে এবং বাঙালির কাছে ইলিশ মাছ খুব জনপ্রিয়। এবং ইলিশ মাছের নাম শুনলেই সবার জিভে পানি চলে আসে না এমন মানুষ পাওয়া যায় না বললেই চলে। ইলিশ মাছ শুধু আমাদের জাতীয় প্রতীক নয়, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি শক্তি সহায়ক বটে। মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পশ্চিম ও গুণে ভরপুর রয়েছে। ১০০ গ্রাম ইলিশে রয়েছে ২১ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি আছে উচ্চ পরিমাণে অমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, নায়সিন,ভিটামিন বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেট সিয়ামসহ ইত্যাদি অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে।
বাঙালি খুব ভালোভাবে ইলিশ দিয়ে রাধতে পারে তার তালিকা শেষ হবে না, সরষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি দই ইলিশের টক, ভাজা ইলিশ ইত্যাদি আরও নানা কিছু। এবং আমরা অনেকেই ইলিশ খেয়ে থাকলে ইলিশের পুষ্টিগন ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা আসুন জেনে নেওয়া যাক।
ইলিশের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ইংলিশে প্রচুর পরিমাণে পোস্টটি গুন ও উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী, আসুন তার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হার্টের জন্য ভালোঃ ইলিশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি, অ্যাসিড থাকার ফলে রক্তের কোলেস্টেরলের তাপমাত্রা কম থাকে।এবং ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হিসাবে যা ইলিশের সম্পৃক্ত চর্বি খুব কম থাকে। যার ফলে আমাদের হার্ট ভালো ও সুস্থ থাকে।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়ঃ ইলিশ মাছ আমাদের রক্তনালীর স্বাস্থ্যের রক্ষা করতে ভালো কাজ করে। এতে রয়েছে EPA ও নামের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যার কারনে ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে রক্তের সঞ্চালন ভালো হয়। এবং তার সাথে থম্বসিসে হওয়ার থেকে ঝুঁকি কমায়।
ত্বকের যত্নঃ ইলিশ মাছের রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাট, যার ফলে ত্বকে সৌন্দর্য রক্ষায় ও রোদ থেকে ত্বকের যে কোন ক্ষতি হওয়া থেকে প্রতিরোধ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি সাহায্য করে। এবং তাছাড়াও ইলিশ মাছে রয়েছে প্রোটিন কোলাজিনের অন্যতম উপাদান। এবং কোলাজিনের ফলে ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে বেশ সাহায্য করে।
চোখ ভালো রাখেঃ ইলিশে রয়েছে ভিটামিন এ,এবং অমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের চোখে সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এবং ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ও চোখ উজ্জ্বল হয়। এবং বয়সকালে দৃষ্টি শক্তি ক্ষীন হয়ে আশার মোকাবেলা করতে ভালো কাজ করে থাকে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড।
খনিজ উপাদানে ভরপুরঃ ইলিশ মাছের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আয়োডিন, সেলিনিয়াম, পটাশিয়াম। এবং থাইরয়েড গ্লান্ড সুস্থ রাখে আয়োডিন ও সেলেনিয়াম ক্ষরণের সাহায্য করে থাকে যা ফলে ক্যান্সারের মোকাবেলা করতে পারে। এছাড়া ইলিশে রয়েছে খনিজ,বিশেষ করে আমাদের ফসফরাস দাঁত এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের পুষ্টির জন্য খুব অপরিহার্য। এবং সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লৌহ এসব স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীরে বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য খুব ভালো উপকারী ও প্রয়োজনীয় উপাদান।
ভিটামিন এ, ডি ও ই ঃ ইলিশ মাছে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি ও ই। বিশেষ করে ইলিশ মাছে ভিটামিন ডি কিও খুব কম খাবারেই থাকে।এবং অস্টিওপোরোসিসের এর জন্যই ইলিশ মাছ খুবই উপকারী। এবং ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এবং শিশুদের রিকেট রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে।এবং এছাড়াও ইলিশ মাছের রয়েছে খনিজ উপাদান যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
এবং শ্বাসনালী ও থাইরয়েড গ্রন্থির সুরক্ষা করতে এই পুষ্টি উপাদান ভালো কাজ করে। এবং এ তো রয়েছে থ্রি ফেটি অ্যাসিড যা অবসাদের জন্য মোকাবেলায় ভালো কাজ করে। এবং তার সাথে আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকেও রক্ষা করে অমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
কোন ইলিশ মাছের স্বাদ বেশি
বিভিন্ন ধরনের ইলিশ বাজারে পাওয়া যায়,যেমন মেঘনার ইলিশ, পদ্মা ইলিশ, সমুদ্র ইলিশ।এতগুলো ইলিশের মধ্যে কোন ইলিশটি সবথেকে বেশি সেরা, এবং বিশেষ করে নদে ইলিশ নাকি সমুদ্রে ইলিশ এনে অনেক ক্রেতা বিভ্রান্ত পড়েন। এবং এই বিভ্রান্তি দূর না হওয়ার ফলে ইলিশ কে ঘিরে বাঙালির বিভিন্ন বিলাস তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। অবশ্যই আগে চিনতে হবে কোনটা আসল ইলিশ।
এবং বিশেষ গড়া বলে থাকেন, যে লাল চোখ থেকে নাকি নীল চোখের ইলিশের সবথেকে বেশি স্বাদ। এবং ইলিশের মুখ যতটা সরু হবে তার স্বাদ ততটাই বেশি হবে। এবং নীল চোখ অথবা তোর মুখে ইলিশ যতই কিনেন আপনি, অবশ্যই আগে মাছের ফুলকা দেখে নিবেন। এবং তাজা ইলিশ চেনার উপায় হলো,তার ফুলকা টা লালচে ভাব হবে। এবং ইলিশ মাছের চোখ ও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও তাজা ইলিশ চকচক করবে, ও উজ্জ্বল দেখাবে। যাকে ভালোভাবে বলে রুপালি ঝিলিক।
অনেকে অনেক রকম কথা বলে, নদীর ইলিশ ভালো নয়, সমুদ্র ইলিশ স্বাদ বেশি। অর্থাৎ মিঠা পানি ইলিশ গুলা বেশ ভালো। এর কারণ হচ্ছে, ইলিশ যত সমুদ্র থেকে দূরে থাকে তত লবণের পরিমাণটা কমতে থাকে। এবং তার স্বাদ তত বেশি বাড়ে।এবং লোনা পানি থেকে ধরলে এবং লবণাক্ত গন্ধ থাকবে। এবং এটি যদি মিঠা পানির হয় তাহলে গন্ধ থাকবে না।
এবং মৎস্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: আনিসুর রহমান জানান যে, দের বা সমুদ্র ইলিশ বোঝার উপায় হচ্ছে, নদির ইলিশ গুলো একটু বেটে খাটো হয়,এবং সাগরে ইলিশ গুলো হয় নাকি সরু লম্বা। এবং পার্থক্য রঙের দিক থেকে রয়েছে। যেগুলো নদীরই ইলিশ সেগুলো একটু বেশি উজ্জ্বল দেখায়, অর্থাৎ নদীর ইলিশ চকচকে বেশি হবে, রং হবে অত্যাধিক রূপালী দেখতে। এবং সমুদ্রের ইলিশ গুলো কম উজ্জ্বল দেখায়।
ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা
ইলিশ মাছের ডিম খেতে ভীষণ মজা, এবং এতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডিমের নানা উপাদান যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- মাথার মস্তিষ্কে স্বাস্থ্য উন্নতি করে থাকে।
- এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস হ্রাস করে থাকে।
- এবং চোখ ভালো রাখে।
- অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- আমাদের হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে বৃদ্ধি করে থাকে।
- এবং হাটের অসুখ প্রতিরোধ করতে ইলিশ মাছ ডিমের রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড,এবং ভিটামিন ডি যা হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ইলিশ মাছ খেলে কি প্রেসার বাড়ে?
আপনি যদি মাসে পরিমাণ মতো ১০০ গ্রাম ইলিশ খান, তাহলে আপনি ভালো ও সুস্থ থাকতে পারবেন। এবং অপরদিকে যাদের বেশি ব্লাড প্রেসার এবং স্বাভাবিকভাবে অনেকটা বেশি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে, একের অর্ধেক ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইলিশ মাছ কি ক্ষতি কর?
বিশেষজ্ঞ জানান যে, ইলিশ মাছ একেবারে মোটেও গুরু পাক না। এই মাছে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিতে ভরা ও উপকারিতা। এবং ১০০ গ্রাম এ লিস্ট থেকে ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। তাছাড়াও ইলিশ মাছের রয়েছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রী ফ্যাটি,অ্যাসিড,ভিটামিন,সোডিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়ামএবং মিনারেল ইত্যাদি । যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
জাতীয় মাছ ইলিশ কেন?
ইলিশ কে পানির উজ্জ্বল মাছ ও শস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এবং এই ইলিশ কে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পরে এই ইলিশ কে দেশের সবথেকে জাতীয় মাছ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমনি ইলিশ দেখতে ছিল অনেক উজ্জ্বল ও সচ্ছ তেমনি খেতে অনেক সুস্বাদু। এবং যদিও ইলিশ মাছ কে নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না।
ইলিশ মাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে অনেকেরই শরীরে এলার্জি বা গ্যাসের সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। এবং সেই ক্ষেত্রে আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনার শরীরে কোনো প্রকারের সমস্যা আছে কিনা এবং ইলিশ মাছের বিরূপ প্রভাব রয়েছে কিনা, থাকলে অবশ্যই এড়িয়ে চলাই উচিত। অবশ্যই মনে রাখবেন যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা সুগারের রোগীদের জন্য ইলিশ মাছ ক্ষতিকারক না।
লেখক এর মন্তব্য
আমরা উপর থেকে ইলিশ মাছের পুষ্টি কোন উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকায় আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এবং আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। ইলিশ মাছ আমাদের চোখ ও ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী।যা আপনার খাবার তালিকায় ইলিশ মাছ রাখতে পারেন। এবং অবশ্য মনে রাখবেন যাদের এলার্জিযুক্ত সমস্যা রয়েছে তারা ইলিশ মাছ থেকে বিরত থাকুন।
আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি থেকে অনেক কিছু জানতেও বুঝতে পেরেছেন, আপনাদের কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্য কমেন্ট করে জানাবেন, ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url