তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত  জানুন
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে জেনে নিন। তরমুজ আমাদের সবার প্রিয় একটি ফল। তরমুজ খেতে ভালোবাসে না এমন কোন মানুষ নাই। কারণ সবাই তরমুজ খেতে খুব ভালোবাসে। এ ফলটি দেখতে হয় লাল রঙের, এবং খেতে অনেক মজাদার। 

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা আমাদের হজম করতে সাহায্য করে।আমরা অনেকেই তরমুজ খেয়ে থাকি,এবং পছন্দ করে থাকি।কিন্তু অনেকেই তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানিনা, আসুন উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

তরমুজ এখন বারো মাসে ফল যা সব সময় পাওয়া যায়, তরমুজ কম বেশী সবাই খেতে পছন্দ করে, এবং ভালবাসে।এ ফলটিতে অনেক গুণ রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তরমুজ শরীরের জন্য কার্যকরী। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগবালাই সংক্রান্ত থেকে দূর করে।তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা

গ্রীষ্মকালের সব থেকে প্রিয় সুস্বাদু ফল তরমুজ। এবং এটি রসালো ও সুস্বাদু এতে প্রচুর পুষ্টি ও গুন রয়েছে, তরমুজ খাওয়ার কিছু পুষ্টি ও গুণ এর উপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হলঃ

হার্ট ভালো রাখেঃ তরমুজ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে দূরে রাখা যায়।এবং এ থেকে হার্ট সংক্রান্ত রোগ গুলো থেকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তরমুজে উপস্থিত সেট্রোলিন রয়েছে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী।

শরীর আর্দ্র রাখতেঃতরমুজে আছে ৯০ শতাংশ পানি, যা আমাদের শরীরে বেশ আর্দ্র রাখতে পারে।

হজম ক্ষমতা বাড়াতেঃতরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি, যে আমাদের হজম শক্তি ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং এছাড়াও এ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে ও খাবার হজম করে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন যা ক্যান্সারের প্রবণতা থেকে অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে। এবং এই লাইকোপোনের কারণেই তরমুজের রং অনেক গারো লাল হয়ে থাকে। এবং এবং এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর যা আমাদের ক্যান্সারের হতে রোধ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ তরমুজে রয়েছে ভিটামিন সি, সমৃদ্ধ, যার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। এবং তাছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬,যার ফলে এন্টিবডি গঠন করে থাকে।এবং এর কারণে শ্তেত রক্ত গুলো কণিকা সঠিকভাবে পরিমাণ তৈরি হয়ে থাকে।

দৃষ্টিশক্তি লোপ প্রতিরোধঃতরমুজে রয়েছে লাইকোপেন উপাদান যা চোখের জন্য খুব ভালো উপকার। এবং যাদের বয়স জনিত তাদের দৃষ্টিশক্তির লোপ এটি একটি সাধারণ সমস্যা,যার ফলে বয়স্করা অন্ধ হতে শিকার হতে পারে। এবং লাইকোপ্যান এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের প্রদাহ বিরোধী হিসেবে খুব ভালো ভূমিকা রাখে,যার ফলে বয়স জনিত দৃষ্টি শক্তি হতে প্রতিরোধ করতে খুব ভালো সহায়তা করতে পারে। যদিও এ বিষয়ে তেমন একটা গবেষণা হয়নি।


পেশীর ব্যথা উপশমের সহায়ক হতে পারেঃ তরমুজে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড সিট্রুলিন,যা ব্যায়ামের পারফরমেন্স ক্ষেত্রে খুব ভালো উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। এবং এটা তার সাথে পেশির ব্যথা কমাতে খুব ভালো সাহায্য করতে পারে।

ত্বকে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহজ হতে পারেঃ তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। যে আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এবং ভিটামিন সি, ত্বককে এবং কোমল চুলকে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন এ, ত্বকে নতুন ভাবে কোষ গজানোর, পাশাপাশি কোষের ক্ষতিপূরণ করতে সহায়তা করে থাকে।

তরমুজ খেলে কি হয়? 

তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি, যাতে হজম শক্তি ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়াও এর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে এবং খাবার হজম করে পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।তরমুজে রয়েছে  লাইকোপেন যা ক্যান্সারের প্রবণতা অনেকটা কমে থাকে। এবং এই লাইকোপেনের জন্য তরমুজটি গাড়  লাল হয়ে থাকে। এবং এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ভরপুর। যার ফলে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। 

তরমুজ খেলে কি ওজন কমে? 

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পানি, এবং এতে কম ক্যালরি থাকায় আপনি যদি পেট পুরে তরমুজ খান তাতে ও কোনো  ওজন বাড়ানোর কোন আশঙ্কা থাকে না। এবং অনেকবার গবেষণা করে দেখা গেছে যে তরমুজে থাকে, উচ্চ সিট সিটবুলিন,যে আমাদের মানব  ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ থেকে কমে দেয়। 

তরমুজ খেলে কি ক্ষতি হয়? 

তরমুজের রয়েছে ফাইবার সমৃদ্ধ  ভিটামিন এ, বি, সি ও খনিজ উপাদান,যার ফলের রোগ প্রতিরোধ করে। এবং তরমুজ আমাদের শরীরে ওজন কমাতে খুব ভালো সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী না । তবে তরমুজে অতিরিক্ত ফাইবার থাকার ফলে এই ফলটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিসহ পেটে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। 

তরমুজে ১০ টি উপকারিতা

  • তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন যা ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে কমাতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, এবং তার সাথে রয়েছে আঁশ। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে যা আমাদের হৃদরোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে রয়েছে কোলিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। এবং মাংসপেশী মুভমেন্ট, দেহ কোষের মেমব্রেন গঠন, মস্তিষ্ক গঠন ওর নার্ভের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য কোলিন বেশ কাজ করে।
  • এবং তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। এবং এর সবথেকে বড় উপকারিতা হচ্ছে,অতিরিক্ত গরম থেকে আপনার শরীরকে পানি শূন্যতা হতে দিবেনা।
  • তরমুজে ভিটামিন সি,রয়েছে যা ত্বক ভালো রাখতে খুব সাহায্য করে
  • মধ্যে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের মাসলের সুস্থতা বজায় রাখে।
  • তরমুজে রয়েছে ভিটামিন সি, বি ৬ সমৃদ্ধ যা, এই দুটি উপাদানের কারণে আমাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে।
  • এবং কিছু অল্প পরিমাণে ক্যালরি রয়ছে তরমুজে। এবং এক কাপ তরমুজ থেকে ৪৬ ক্যালোরি পাওয়া যায়। যার ফলে আপনি নিশ্চিত তো খেতে পারেন এটি।
  • তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

তরমুজের অপকারিতা

তরমুজের যেমনি উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে এবং তরমুজ খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

হমজে গন্ডগোলঃ তরমুজে রয়েছে প্রচুর ফরমানে পানি ও ডায়েটারি ফাইবার। এবং অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে হজমে গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। এবং বিশেষ করে ডায়রিয়া, খাবার হজম না হওয়া,গ্যাস জাতীয় নানা সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।এবং এতে চিনির যৌগ হিসাবে পরিচিত সরবিটল রয়েছে। এবং যার ফলে পাতলা পায়খানা ও গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।

গ্লুকোজ স্তর বাড়ায়ঃ এবং যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের বেশি তরমুজ খাওয়া একদমই উচিত নয়। এবং সে ক্ষেত্রে রক্তের চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তরমুজ। মদকে স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা হোক করা হলেও গ্লাসেমিক ইনডেক্স ৭২ কোন খাবারে রক্তে শতকরা কতখানি বাড়ে তার ওপর নির্ভর করে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোডের ওপরে। এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০ এর থেকে বেশি হলে তা উচ্চ তাপমাত্রায় ৫৫ এর থেকে নিচে হলে কম তাপমাত্রা। এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত উচ্চ তাপমাত্রা হবে তার রক্তের শর্করাও তত বেশি বাড়ায়। আবার যদি গ্লাইসেমিক লোড ২০ এর বেশি হলে তার উচ্চ তাপমাত্রা ১১ এর নিচে কম। তাই অবশ্যই নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।


যকৃতে প্রদাহঃ এবং যারা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং তারা বেশি পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার ফলে, তাদের যকৃতে প্রদাহ হতে পারে।এবং এতে রয়েছে প্রচুর লাইকোপেন থাকায় অ্যালকোহলের বিক্রিয়া প্রদাহ তৈরি করে থাকে। এবং এ ধরনের প্রদাহ যকৃতে যথেষ্ট ক্ষতিকর।

শরীরে অতিরিক্ত পানিঃ অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে শরীরে পানির পরিমাণটা বেশি বেড়ে যায়। যার ফলে শরীর থেকে সোডিয়ামের পরিমাণটা অনেকটা কমে যায়।এবং এ পানি গুলো শরীর থেকে বাড়াতে না পারলে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং বিশেষ করে পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্ত বোধ করা, এবং কিডনি দুর্বল হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

হৃদরোগঃ কর্ম দিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আমাদের শরীর ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তরমুজ খাওয়ার ফলে আমাদের হৃদ যন্ত্র সুস্থ থাকে। এবং এছাড়াও আরো মাংস বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রাবিহীন পটাশিয়াম শৈলে গেলে হৃদ যন্ত্রের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, এবং নাড়ির গতি কমে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে।
এবং গবেষক ও পুষ্টিবিদেরা জানান যে ১০০ গ্রাম তরমুজে ৩০ ক্যালরি রয়েছে। এবং এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রামের রয়েছে ৬ গ্রাম চিনি থাকে। এবং তরমুজে যেহেতু পানির পরিমাণটা বেশি থাকে তাই ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ খাওয়াটা সহজ মনে হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

আমরা উপর থেকে যা জানলাম তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তরমুজ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অনেক উপকারিতা হয়, কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অপকারিতা রয়েছে।এবং তরমুজে অনেক পুষ্টি ও গুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী, তাই তরমুজ আমরা পরিমাণ মতো খাব। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই অতিরিক্ত তরমুজ না খাওয়াটাই উচিত। আপনার শরীরে কোন ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন যে কোন ফল। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের মতামত, ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url